হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়া—এ কথাতেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে একসময় এদেশ ছিল হাতি-ঘোড়ায় পরিপূর্ণ। একদা বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা এমনকি ভিক্ষাবৃত্তিতেও ব্যবহার করা হতো বিশালাকৃতির জনপ্রিয় এই প্রাণী। এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল জায়গাগুলো আজও মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশে হাতির গৌরবময় পদচারণের কথা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমানে যান্ত্রিক নগরায়ণের করাল গ্রাসে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে পড়ায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের হাতি। নিষ্ঠুর মানুষের হাতে জীবন দিতে হচ্ছে তাদের। হাতির এই বিলুপ্তি দেশের চামচিকা সম্প্রদায়ের কপালে ফেলেছে চিন্তার ভাঁজ। হাতি কাদায় পড়লে চামাচিকা লাথি মারে—এ কথা সবারই জানা। চামচিকা সম্প্রদায়ের এখন কী হবে? হাতি না থাকলে তারা কাকে লাথি মারবে? এ সম্পর্কে দেশের সুশীল সমাজের কোনো ভাবনাই নেই। তাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে আজ প্রশ্ন উঠেছে। কাদায় পড়া হাতিদের লাথি মারার জন্য চামচিকারা গঠন করেছে বিশেষ স্কোয়াড। অতি উন্নত প্রযুক্তির প্রচলন করায় কোথাও কোনো হাতি কাদায় পড়লে তারা খুব সহজেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপারেশন চালায়। কিন্তু দ্রুতগতিতে হাতি কমতে থাকায় তাদের এই কার্যক্রম এখন হুমকির মুখে। পর্যাপ্তসংখ্যক হাতি না থাকায় বিশেষ স্কোয়াডের সদস্য চামচিকাদের আজকাল অলস সময় কাটাতে হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে একেবারেই দৃষ্টিপাত করছে না। ফলে চামচিকা সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ। তাই হাতি বাঁচাতে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও হাতি গবেষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করার মাধ্যমে অতিসত্বর হাতির বিলুপ্তি রোধ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিয়ে চামচিকাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০৯, ২০০৯
Leave a Reply