গৃহকর্তার একটা সংজ্ঞা পেলাম সেদিন। ‘গৃহকর্তা হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি ছোট ছোট মুখের অন্ন জোগান আর নিয়মিত একটি বড় মুখের ধমক খান।’ এই বড় মুখটা হচ্ছে সংসারের আসল কর্ত্রী…অর্থাত্ গৃহিণী। এখন কথা হচ্ছে, সেই গৃহিণীরা সব একযোগে ক্রমেই রেগে উঠছেন…কেন রেগে উঠছেন, তার ব্যাখ্যায় পরে যাই। তার আগে ওই রাগবিষয়ক একটি চক্র উপস্থাপন করতে চাই। চক্রটা এ রকম…অবশ্য চক্র উপস্থাপনের আগে একটা বাংলা প্রবাদ জানা জরুরি, সেটা হচ্ছে ‘রাজা চালায় রাজ্য আর রাজাকে চালায় রানি।’ তার মানে, নেপথ্যের রানি মানে মতান্তরে ওই নারী খুবই শক্তিশালী, বলাই বাহুল্য। এবার চক্রে যাই…এক বিরাট অফিসের বিরাট বস। তিনি তাঁর রানির মানে স্ত্রীর কঠিন ধমক খেলেন একদিন। ধমক খেয়ে তাঁর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তিনি অফিসে এসে সেই মেজাজ ঝাড়লেন তাঁর সেক্রেটারির ওপর…‘কী কাজ করেন ঘোড়ার ডিম, একটা লেটারে চৌদ্দটা ভুল।’ বসের ঝাড়ি খেয়ে সেক্রেটারির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে তার মেজাজ ঝাড়ল পিয়নের ওপর, ‘কী ঘোড়ার ডিমের চা দিস? এর চেয়ে বিষ খাওয়া ভালো।’ ঝাড়ি খেয়ে পিয়নেরও মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে তার মেজাজ ঝাড়ল অফিসের গেটের দারোয়ানের ওপর, ‘ঘোড়ার ডিমের ডিউটি করো, উল্ডাপাল্ডা লোক ঢোকে দেখো না?’ সামান্য পিয়নের ঝাড়ি খেয়ে দারোয়ানের মেজাজও গেল খারাপ হয়ে। সে তার পায়ের কাছে বসে থাকা নেড়ি-কুকুরটাকে দিল এক লাথি! লাথি খেয়ে নেড়ি-কুকুর ঘেউ ঘেউ করে পালাতে গিয়ে অফিসের দিকে আসা এক তরুণের ওপর গিয়ে পড়ল…তারপর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে…’ সেই থিওরিতে দিল বসিয়ে এক রাম কামড়। ঘটনাচক্রে সেই তরুণ ছিল সেই বসের ছেলে! ব্যস, হয়ে গেল…নাভির নিচে ততক্ষণাত্ চৌদ্দটা ইনজেকশন!
অর্থাত্ স্ত্রীর এক ধমকে রাগের এই চেইন রি-অ্যাকশন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, আমরা চাক্ষুষ দেখলাম! সে জন্যই বলছিলাম, গিন্নিরা এখন সব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন ক্রমেই…কারণ সেই ঘড়ির কাঁটা, যেটা উনিশে জুনে এক ঘণ্টা এগিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পেছাচ্ছে না বা পেছাবে না—এই মহান সত্য উদ্ঘাটন করে তাঁরা ক্রমেই ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছেন…এখন যদি রাগের সেই চেইন রি-অ্যাকশন শুরু হয় সর্বক্ষেত্রে? তাঁরা ফুঁসে উঠবেন না-ই বা কেন? বাচ্চাকে উঠতে হয় পাঁচটায়। কারণ স্কুলের গাড়ি আসবে ছটায়…আর এখন পাঁচটা মানে গভীর রাত। এই নিশি রাতে কে চায় নিজের বাচ্চাকে অন্ধকারে ছেড়ে দিতে? অথচ ঘড়ির কাঁটা এগিয়েছিল বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের জন্য…থাকবে না লোডশেডিং…আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে ঢাকা নগর…ইত্যাদি ইত্যাদি। বাকি কাহিনী সবারই জানা। এই যখন অবস্থা, তখন এক স্বামী (হয়তো স্ত্রীর কাছে ধমক খেয়েই) গেল একজনের কাছে পরামর্শের জন্য!
কী করা যায় বলেন তো?
কী বিষয়ে?
এই যে শীতকাল এসে গেল, অথচ এখনো ঘড়ির কাঁটা আগের জায়গায় আনার কোনো পরিকল্পনা কারও নেই! এই ভেজাল কীভাবে দূর করা যায়?
মদ খান।
মানে?
মানে বলছি মদ্যপান শুরু করুন।
মদ্যপান শুরু করলে এই ভেজাল দূর হয়ে যাবে?
অবশ্যই।
কীভাবে? মানে, বুঝলাম না!
এই যে আমাকে দেখছেন মদ খাই বলে এখন সবকিছু দূরে চলে গেছে—স্ত্রী, সন্তান, বাড়িঘর…সব…!
বি.দ্র.: ওপরের এই মাতালের কথায় একেবারেই কান দেবেন না। মদ সর্বনাশ ডেকে আনে। মাদককে না বলুন।
আহসান হাবীব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০২, ২০০৯
Leave a Reply