ক্রমিক খুনি (সিরিয়াল কিলার) হিসেবে জনমনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন রসু খাঁ। কিন্তু তাঁর মতো আরও কিছু ক্রমিক চরিত্র সমাজে ক্রমিক সমস্যা তৈরি করে চলেছে। তাদের নিয়ে গবেষণা করেছেন খাদিজা ফাল্গুনী
ক্রমিক কলার
শত ধমকেও এই কলারদের কিচ্ছু হয় না। দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতিতে এদের কল আসতে পারে। মেয়েদের নম্বর পেলেই তারা টুকে রাখে। তারপর ‘যা থাকে কপালে’ বলে কল করে এবং মেয়েদের গলা শুনলেই ‘পাইছি রে পাইছি’ বলে প্রবল উদ্যমে ন্যাকামো শুরু করে। কোনো এক অদ্ভুত কারণে তারা দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করে যে সে চাইলেই মেয়েটি তার সঙ্গে গল্প করা শুরু করবে। কলব্লক কিংবা সিম না পাল্টানো পর্যন্ত তারা শান্ত হয় না।
ক্রমিক সিনেমা নির্মাতা
এই প্রকার চরিত্র বাংলা সিনেমা নির্মাতা জগতে বেশি দেখা যায়। বিখ্যাত হওয়ার তীব্র আশা এবং নিজের প্রতিভার অদম্য মানসিক চাপে তাঁরা সামাজিক অসংগতি রোধের তাড়নায় সামাজিক অসংগতিপূর্ণ সিনেমা তৈরি করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই সব অসংগতি রোধে তাঁরা ডায়ালগ-সর্বস্ব নর্তনকুর্দনে পারদর্শী নায়ককে উপস্থাপন করেন। সঙ্গে থাকে শীতকালেও নায়িকার বৃষ্টিভেজা নাচ। এই প্রবণতায় আক্রান্ত হলে এঁদের থামানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।
ক্রমিক ফেইলিয়র
‘ক্রমিক ফেইলিয়র’রা শুধু ফেলের পিলার স্থাপন করে যান। ছাত্রজীবনে তাঁরা বিষয়ভিত্তিক ফেল করেন, এর মাত্রা গণিতে একটু বেশি থাকে। তাঁরা যেকোনো স্থানে সময়মতো পৌঁছাতে ব্যর্থ হন, চাকরি পেতে ব্যর্থ হন, এমনকি প্রেমের ক্ষেত্রে পছন্দের মানুষটি তাঁকে একসময় আঙ্কেল ডেকে বসে! আজীবন তাঁরা ব্যর্থ পুত্র, ব্যর্থ স্বামী কিংবা ব্যর্থ পিতার খেতাব বয়ে বেড়ান। এই ক্রমিক ব্যর্থতার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁরা জীবনের শেষ পর্যায়ে ‘এই জীবনের কোনো অর্থ নেই’ এই মহাজ্ঞান লাভ করেন।
ক্রমিক ব্যর্থ প্রেমিক
ক্রমিক ব্যর্থ প্রেমিকেরা বাল্যকাল থেকেই ক্রমিক প্রেম এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা লাভ করেন। শিশুকালেই বান্ধবীদের প্রতি তাঁদের বিশেষ পক্ষপাতিত্ব লক্ষ করা যায়। কানামাছি খেলায় সুন্দরী বান্ধবীদের পক্ষে তাঁদের গলাবাজি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। স্কুলে বা কলেজে সরাসরি প্রেমের ফিল্ডে প্রথম বলেই তাঁরা ক্লিন আউট হন। কিন্তু তারপরও তাঁরা ‘একবার না পারিলে দেখা শতবার’ কিংবা ‘প্রেম প্রতিবারই নতুন’ নীতি অবলম্বন করে প্রেমের ভাঙাগড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
ক্রমিক সংগীতশিল্পী
‘সুর-যন্ত্রণা’ শব্দটি সম্ভবত তাঁদের দেখেই কেউ আবিষ্কার করেছিলেন। অর্থহীন এবং অশ্লীল কথার গান তাঁরা বেসুরে, বেতালে তীব্র নিষ্ঠায় গেয়ে যান। সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে হলেও তাঁরা সবাইকে সেই গান শোনাতে চান। ক্যাসেট বের করেন এবং প্রয়োজনে তা ফ্রি বিলি করেন। তাঁদের বিচিত্র ভঙ্গিমায় এবং পোশাকে তোলা ছবি-সমৃদ্ধ পোস্টার প্রায়ই পাবলিক টয়লেট, বাসস্ট্যান্ড কিংবা ঝুপড়ি দোকানের বেড়ায় শোভা পায়।
ক্রমিক ভিলেন
আশ্চর্যজনকভাবে সত্যি যে সিনেমা জগতে ভিলেনরা ক্রমিকভাবে ভিলেনের চরিত্রেই অভিনয় করে যান। বয়স কম থাকতে তাঁরা মূল ভিলেনের ছেলের চরিত্রে জুনিয়র ভিলেনের অভিনয় করেন। যুবক হলে রংবাজ, চাঁদাবাজ দলের নেতা এবং বয়সকালে তাঁরা মূল ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। কিন্তু ভিলেনের ক্রমিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা খুবই দুর্লভ। যে কয়টি সিনেমায় তাঁরা ভালো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেন, সে কয়টি সিনেমায় দর্শকেরা প্রতি মুহূর্তে আশঙ্কায় থাকে, এই বুঝি একটা খারাপ কাজ করে ফেলল!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০২, ২০০৯
Leave a Reply