আবহাওয়া অফিসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই বাতাসের হাবভাব দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে শীতকাল প্রায় এসে গেছে। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহের পর এ দেশের অনেকের কাছে শীতকাল যেন এক পরম আশীর্বাদ। আর তাই শীতকালকে বরণ করে নিতে অনুষ্ঠিত হয় কত উত্সব। কিন্তু কথায় আছে কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। সাধারণভাবে শীতকাল পিঠাপুলির সময় হলেও কিছু মানুষের জন্য শীতকাল এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির রূপ নেয়। বিশেষ করে বাংলা সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের কাছে শীতকাল এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। চলচ্চিত্র বাঙালিদের প্রাণ। এই চলচ্চিত্র যেন সমাজের এক আয়না—যাতে প্রতিফলিত হয় দেশ-মাটি তথা আপামর জনতার গৌরবময় সংগ্রামী জীবন। আর এই চলচ্চিত্রের প্রাণ হচ্ছে বৃষ্টিভেজা নায়ক-নায়িকার নাচ-গান। বৃষ্টিভেজা নাচ-গান ছাড়া কোনো সিনেমার কথা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু নায়ক-নায়িকারা শিডিউল মানলেও বৃষ্টি কোনো শিডিউল মানে না। তাই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র এফডিসির কৃত্রিম বৃষ্টিতে ভিজেই শুটিং করতে হয় দর্শকদের চোখের মণি নায়ক-নায়িকাদের। দর্শকদের বিনোদনের জন্য শীতকালের বরফ-শীতল পানির বৃষ্টিতে ভিজে মুখ বুজে তাদের শুটিং করতে হয়, যা অত্যন্ত মর্মান্তিক! তাদের মুখে থাকে হাসি আর গান, কিন্তু অন্তরের গভীরে থাকে তীব্র মর্মবেদনা। তাদের এই বেদনা দেখার কি কেউ নেই? শীতকালে এভাবে ক্রমাগত ঠান্ডা পানিতে ভেজার কারণে তারা জ্বর, টনসিল, সর্দি-কাশি এমনকি নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রতিবছর এই ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে শুটিং পিছিয়ে দেয় অনেক নায়ক-নায়িকা। ফলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গুনতে হয় লোকসান। অথচ বরাবরের মতো কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অপার সম্ভাবনাময় চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। আর একটি দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হওয়া মানে তার গৌরবময় সংস্কৃতি নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। অতএব, দেশ ও সংস্কৃতি রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে অতি সত্বর শীতকাল উপলক্ষে এফডিসিসহ শ্যুটিং স্পটগুলোতে সহনীয় মাত্রার গরম পানির বৃষ্টির ব্যবস্থা করে সম্ভাবনাময় এ খাতটিকে রক্ষা করতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ০২, ২০০৯
Leave a Reply