মেছো ভূত
মেছো ছিল খুবই নরম প্রকৃতির। এক শাঁখচুন্নির জন্য তার মনে ছিল প্রেম, চোখে ভালোবাসা আর হূদয়ে উজান-ভাটা। শাঁখচুন্নিও তাকে ভালোবাসত। তবে সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি। হ্যান্ডসাম ড্যাশিং স্কন্ধকাটার প্রেমে পড়ে যায় শাঁখচুন্নি। এক সন্ধ্যায় তারা দুজন যখন কক্সবাজারের এক রেস্তোরাঁয় প্লেইন পোলাও অ্যান্ড রূপচাঁদা ফ্রাই দিয়ে ডিনার করছিল, সে সময় শাঁখচুন্নি ব্যাপারটি খুলে বলে এই ভূতকে। শাঁখচুন্নির ছ্যাঁকা খেয়ে ভূত যখন অতীব মর্মাহত ও বাকরুদ্ধ, ঠিক সেই সময় পাষাণী শাঁখচুন্নি নিজের প্লেটে পোলাও বাড়তে বাড়তে তাকে বলে, ‘এঁকঁটুঁ মাঁছঁ দাঁওঁ তোঁ!’ সেই মুহূর্তেই প্রেমিকভূত জ্ঞান হারিয়ে গোঁ গোঁ করতে করতে রেস্তোরাঁর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তিন দিন পর হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর চিকিত্সকেরা তাকে সুস্থ বললেও ঘোষণা দেন, অতিরিক্ত মানসিক আঘাতের ফলে তার স্মৃতি লোপ পেয়েছে। তবে নিজের নাম-পরিচয়-কর্ম ভুলে গেলেও আজও সেই প্রেমিকভূতের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে অজ্ঞান হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তটুকু। আর তাই এখনো তাকে বিভিন্ন জেলেপাড়ায় মাছ ধরে বাড়ি ফেরা জেলেদের বা মাছ রান্নারত জেলেনিদের আশপাশে শুধুই বলতে শোনা যায়, ‘এঁকঁটুঁ মাঁছঁ দাঁওঁ তোঁ!’
ছাপাখানার ভূত
ইনি ছিলেন একসময় ভূতসমাজের মহান কবিভূত। তাঁর লেখা কবিতা ‘চন্দ্রবিন্দুহীন কথোপকথন’ ছিল তরুণ ভূত-পেতনিদের মধ্যে অসম্ভব প্রিয়। সে সময় তাঁর কবিতা ছাড়া কোনো ভূত-পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা ভাবাই যেত না। কিন্তু ভূতরাজ্যে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আসার পর থেকে কবিতা তো দূরের কথা, বিজ্ঞাপনের ঠেলায় পত্রিকায় খবর ছাপানোরই জায়গা থাকত না। অপ্রকাশিত থাকার যন্ত্রণা বাড়তে বাড়তে ডিপ্রেশনে রূপ নেওয়ায় তিনি ভূতরাজ্য ছেড়ে ফুলটাইমের জন্য মানবসমাজে চলে এসে ঠাঁই নেন বিভিন্ন ছাপাখানায় এবং সুযোগ পেলেই বিভিন্ন বইয়ে ছাপার মাঝেমধ্যে নিজের লেখা ঢুকিয়ে দেন। মানুষের মধ্যে ভূতভাষার তেমন প্রচলন না থাকায় তারা প্রায় মহান সেই কবিতার চরণগুলো ছাপার ভুল ভেবে থাকে।
স্কন্ধকাটা ভূত
স্কন্ধকাটা আগে সাধারণ ভূতই ছিল। একদিন…থুক্কু, একরাতে সে কারওয়ান বাজারের এফডিসি এলাকায় ভয় দেখাচ্ছিল। একজন মানুষকে সে হেঁটে যেতে দেখে পেছন থেকে যেই ভয় দেখাতে গেল, অমনি সেই লোকটি ঘুরে দাঁড়ান এবং তাঁকে দেখে ভূত নিজেই ভয়ে ভিরমি খেয়ে যায়। ঘটনাচক্রে সেই লোকটি ছিলেন সদ্য এফডিসি থেকে শুটিং শেষ করে বের হওয়া এক সুপারহিট হিরো এবং ঘটনাচক্রে তখন তাঁর মেক-আপ ছিল না। যাই হোক, ভয় দেখাতে গিয়ে নিজেই ভয় পাওয়ায় মরমে ভূত সাহেবের ভূতসমাজে মাথা কাটা যায়। তখন আবার ভূত মেডিকেলে ধর্মঘট চলছিল, তাই তার মাথাও জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই সে স্কন্ধকাটা ভূত।
কুনি ভূত
কুনি ভূত একসময় সাধারণ হলেও ছিল অসাধারণ মেধাবী। ভৌতিক স্কুল-কলেজে সে ছিল তুখোড় ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়েও সে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ছিল। তবে সেখানে প্রথম সেমিস্টার থেকেই সে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং তার পড়াশোনার বারোটা মানে ডিজিটাল টাইমে তেরোটা বেজে যায়। ফাইনাল ইয়ারে পরীক্ষার হলে সে বারবার পাশে বসা গেছো ভূতের খাতা থেকে টুকলিফাই করার চেষ্টা করলে ইনভিজিলেটর তাকে রুমের কোনার এক সিটে নিয়ে বসায়। ফলে সে অনার্স ফাইনালে লেটার মার্কসহ ফেল করে। সেই হাতাশায় সে রাজনীতি, পড়াশোনাসহ জনসমক্ষে ভয় দেখানোও ছেড়ে দেয়। শুধু অমাবস্যায় তাকে বিভিন্ন বাড়িঘরের কোনায় ছোট ছেলেপুলেকে ভয় দেখাতে দেখা যায়।
অনিকেত খান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১২, ২০০৯
Leave a Reply