উচ্চশিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করার জন্য দেশে রয়েছে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ছোটবেলার প্রতিটি বইয়েই ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় আমি বড় হয়ে ডাক্তার হব এবং অসহায় মানুষের সেবা করব এ-জাতীয় কথা লেখার কারণে হয়তো ডাক্তারি পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের একটা আত্মিক টান লক্ষণীয়। তাই অনেকেই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। ক্লাসে বইখাতা নেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাধ্যতামূলকভাবে অ্যাপ্রোন নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই অ্যাপ্রোনের কারণে দেশের আপামর ছাত্রসমাজের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ভয়ানক বৈষম্য। মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অ্যাপ্রোন পরে বা হাতে নিয়ে ঘোরাফেরা করে, যা তাদের ইন্ডিকেটর হিসেবে কাজ করে থাকে। কারও সঙ্গে অ্যাপ্রোন থাকলে সবাই বোঝে যে সে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। অ্যাপ্রোন পরিহিত কাউকে দেখলেই মানুষ আপ্লুত হয়ে বলে, ‘ও, তুমি মেডিকেলে পড়? ব্রিলিয়ান্ট!’ কিন্তু অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান—যেমন বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্রোনের রেওয়াজ না থাকায় সেখানকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেউ চেনেই না, মেধার স্বীকৃতি দেয় না। ফলে তারা প্রতিনিয়ত অবহেলার শিকার হচ্ছে। অ্যাপ্রোন পরিহিত একটা ছেলে রাস্তাঘাটে, শপিং মলে মেয়েদের কাছে যে পাত্তা পাচ্ছে, শুধু অ্যাপ্রোনের অভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রটি সেই পাত্তা পাচ্ছে না। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের বৈষম্য কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই অতিদ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সব প্রতিষ্ঠানে একমুখী শিক্ষার মতো একমুখী অ্যাপ্রোনের প্রচলন করে চলমান বিভক্তি-বৈষম্য দূর করা যায় কি না, সরকার তথা কর্তৃপক্ষকে সেটাই ভেবে দেখতে হবে।
সূত্র: প্রথম আলো, অক্টোবর ০৫, ২০০৯
Leave a Reply