এই জ্যোতিষীটির কথা আপনারা শুনে থাকবেন! ভয়াবহ এঁর ক্ষমতা। এক স্কোয়াড জিনের পালক। হুজুরের ফি হচ্ছে বিডিটি দেড় হাজার এক (টাকা)। তো, সে বার একটা জালিয়াতির কাজে কনসালটেনসি করে আমি কিছু পয়সা কামাই। ওটা রাখি গোপন অ্যাকাউন্টে। বউকেও বলি না। কেননা, বউয়েরা স্বামীর লুকোনো টাকা-পয়সার খোঁজ বের করে ফেলতে বিশেষ দক্ষ। ইতিমধ্যে ওই জালিয়াতির দুর্গন্ধ পুলিশের নাকে যায়। কোনো প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে আমিও তখন সড়াত্ করে চলে যাই আন্ডারগ্রাউন্ডে—একদম ফ্রম শেখেরটেক টু মাদারটেক। পুলিশ বলতেই এখনো মনে আসে সেই খাকি পোশাক। তো, একদিন মাদারটেক বাজারে খাকি পোশাক পরা বিদ্যুত্ বিভাগের লোকজন দেখে আমি হাতের ঝোলা-মোলা ফেলে ঝেড়ে দৌড়। দুর্গতির একশেষ আর কি! এভাবে টেনশনে গেলাম শুকিয়ে। যখন-তখন ভাইরে, খালি চোঁয়া ঢেঁকুর ওঠে। প্যান্টের ঢিলে হয়ে যাওয়া কোমর এক হাতে সামলে রাখতে হয়। ঘুমের মধ্যে স্ত্রীর হাত গায়ে এসে পড়লে—‘হুজুর আই অ্যাম নির্দোষ!’ বলে চিত্কার করে উঠি। এ অবস্থায় ওই জ্যোতিষীর সন্ধান মেলে। এক সোমবারে পকেটে দুই বান্ডিল অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আমি হাজির হই তাঁর চেম্বারে।
উরি-ব্বাপ্, যেমন বিশাল দেহ, তেমনই জমকালো পোশাক! টেবিলের ওপর সুন্দরভাবে বিছিয়ে রাখা তাঁর এক্সট্রা লং দাড়িখানা যেন প্রদর্শনীর আইটেম। আমাকে দেখেই হুংকার ছাড়লেন, ‘তেরে নাপাক জেব মে হারাম চিজ হ্যায়। জলদি নিকাল, হারামজাদা!’ অর্থাত্, তোর অপবিত্র পকেটে অবৈধ বস্তু রয়েছে, জলদি বের কর। আমি তত্ক্ষণাত্ আদেশ পালন করলাম। তিনি হেসে বললেন, ‘টোটাল কিতনা চুরায়া?’ অর্থাত্, মোট কত চুরি করেছিস? আমি কেঁদে উঠে বললাম, ‘পেটের দায়ে ওনলি দুই লাখ কামাতে বাধ্য হুয়া, স্যার। আপনার জিন দিয়ে আমাকে বাঁচান।’ হুজুর বললেন, ‘আমার পুরো জিন স্কোয়াডটাই অ্যাসাইনমেন্টে চলে গেছে। এদের কাউকে কল ব্যাক করতে গেলে খচ্চাপাতি একটু বেশি পড়ে যাবে।’ আমি বললাম, ‘জো হুকুম, জাহাপনা।’ তিনি আমার টাকার বান্ডিল দুটো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে বললেন, ‘যা, আগামীকাল ডিজিটাল টাইম রাত তিনটা ৫৬ মিনিটে আমার জিন তোর কাছে গিয়ে কেসের ডিটেল নোট করে আনবে। মামলা চলবে, আর তুই প্রত্যেক সোমবারে ডবল ফিসহ এখানে এসে হাজিরা দিতে থাকবি। তা না হলে…এই বলে তিনি হিংস্রভাবে আমার দিকে দাঁত-মুখ খিঁচালেন। আমি কোনোমতে শুধু বললাম, ‘তবে স্যার, আমার বিবি জিন-ভূত খুব ভয় পাতা হ্যায়। আন্ডার দ্যা সিচুয়েশন’… জ্যোতিষী খ্যাঁক খ্যাঁক করে বাজে ধরনের একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা নে, তোর বিবির জন্য এই কবচটা দিয়ে দিচ্ছি। দেখি, তোর শার্টের হাতার ভাঁজে লুকিয়ে রাখা ওই ৫০০ টাকার নোটটা আমাকে দে।’ ভাইরে, এভাবে দিন যায়। নো জিন সার্ভিস। নো অগ্রগতি। ওনলি হাজিরা, ডবল ফি, আংটি-পাথর অ্যান্ড খচ্চাপাতি। হুজুর বলেন, ‘নেক্সট সোমবার আসুক।’ এদিকে আমার টাকা-পয়সা সব প্রায় শেষ। তো, গত সোমবারে চেম্বারে পৌঁছে দেখি দরজায় তালা লাগানো। দেয়ালের কাছে উবু হয়ে বসে একটা লোক সেদিনকার ‘রস+আলো’ পড়ছে। সে-ই সংক্ষেপে আমাকে জানাল, জইতিশি হুজুর তাঁর জিন স্কোয়াড ছালায় ভরে আফগানিস্তানে চলে গেছেন জরুরি অ্যাসাইনমেন্টে। আনটিল ফারদার অর্ডার, বাংলাদেশে তাঁর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
কাওসার আহমেদ চৌধুরী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০০৯
Leave a Reply