কান: যা অনুপস্থিত থাকলে চোখে সমস্যা হলে আমাদের কনট্যাক্ট লেন্স পরতে হতো।
কোপানল: কোপ দিয়ে যে অনল বা অগ্নি তৈরি হয়, যেমন: দেশলাই ব্যবহার করে রান্নার জন্য আমরা কোপানল তৈরি করি।
কোন্দল: দলাদলির মাধ্যমে সৃষ্ট ঝামেলা। ঝামেলার দায়ভার একদল অপর দলের ওপর দিয়ে থাকে। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন থেকে যায়, ঝামেলার জন্য দায়ী কোন দল? এ প্রশ্নের সমাধান হয় না বলে এ ঝামেলার এ রকম নামকরণ।
কাক: সর্বজনীন ভ্রাতুষ্পুত্র। উঠতি কাব্যচর্চাকারীদের বেসরকারি পরিসংখ্যানে যাদের সংখ্যা প্রায়ই উল্লেখ করা হয়।
কৈফিয়ত: টাকা-পয়সার হিসাবের জবাবদিহি থেকে উত্পত্তি হয়েছে। (যদিও এখন সব ধরনের জবাবদিহিতায় ব্যবহূত হয়) স্কুল-কলেজের নানা ফির কথা বলে টাকা মারিংকরণ প্রতিরোধে অভিভাবক মহোদয় যখন জিজ্ঞাসু হন, ‘কৈ কৈ এত ফি লাগছে?’ সেখান থেকেই বাক্যের ‘কৈ’ ও ‘ফি’যোগে অত্যাধুনিক ব্যাকরণমতে ‘এত’ থেকে ‘য়ত’ হয়ে (কৈ+ফি+এত/য়ত) শব্দের উত্পত্তি।
কেবিনেট: কেবি+নেট
যে নেট স্পিড কিলোবাইট বা কেবি পার সেকেন্ডে হিসাব করা হয়। যেমন: ৩০০ কেবিপিএস। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে এর স্পিড খুবই কম।
কেদারা: ইংরেজি চেয়ারের কঠিন ব্যাঁকা (সহজ-সরলের বিপরীত শব্দ) বাংলা প্রতিশব্দ। ‘কে’ ও ‘দাঁড়া’ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ‘কে’ ‘দাঁড়া’ শব্দদ্বয়ে আদেশমূলক ও অবিনীত ভাব আছে এবং বসার জিনিসে দাঁড়ানোর নির্দেশ আছে। এই সব নানা কথা চিন্তা করে বাঙালিমাত্রই এই প্রতিশব্দ ব্যবহার না করে চেয়ারই ব্যবহার করে।
কেঁচো: সাপুড়েরা সাপ ধরার জন্য প্রায়ই যাদের খুঁড়তে বের হয়।
কেউটে: সাপবিশেষ, যাদের কামড়ে কেউ বেঁচে থাকে না বা টেকে না। ‘কেউ টেকে না’ —এই বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রথমে এ সাপের নাম ছিল ‘কেউটেকেনা সাপ’। কিন্তু সরকার বন্য প্রাণী কেনা ও বেচা নিষেধ করায় ‘কেউটেকেনা’ নামের ‘কেনা’ অংশ বাদ দিয়ে শুধু ‘কেউটে’ নামই স্থির হয়।
কৃপণ: যে পণ (প্রতিজ্ঞা) করে, কাউকে কখনো পণ (যৌতুক) দেবে না। দেশে কৃপণ বাড়ানোর জন্য গণসচেতনতা দরকার।
কোষাগার: কোষ বা সেলদের আগার, যেমন: প্রাণীদেহ।
ক্লোন: ক্লোন…ক্লোন…ক্লোন…ক্লোন… (দূর, শব্দেরও হয় জানতাম না তো!)
কোলাকুলি: একধরনের কোলা পানীয়, যা দিয়ে কুলি করতে হয়। সম্ভবত ব্যাপারটা দাঁতের জন্য ভালো।
কুশীলব: যে অভিনয়শিল্পী বিটিভির বাংলা নাটকের প্রায় প্রতিটিতে অভিনয় করেছেন। সমস্যা হলো, এ মহান শিল্পী খুবই আত্মপ্রচারবিমুখ, তাই প্রায় কেউই তাকে চেনে না।
কুয়াশা: মন্দ আশা। বাক্যগঠন—সমীরের হাবভাব ভালো মনে হচ্ছে না। ওর মনে কোনো কুয়াশা জমেনি তো?
কবি: প্রখর সূর্যকে মায়াময় চন্দ্র কিংবা মাকড়সাকে বর্ণিল প্রজাপতি ইত্যাদি কল্পনা করতে সক্ষম মানবসম্প্রদায়বিশেষ, যারা কোনো কথাকে জিলাপির চেয়ে অন্তত আড়াই গুণ বেশি প্যাঁচ না দিয়া মুখনিঃসৃত হতে দেন না।
কলঙ্ক: অঙ্ক করার কল বা মেশিন। যেমন: ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার ইত্যাদি।
কবিরাজ: King poet-এর বাংলা। যে রাজা কবি বা যে কবি রাজা কিংবা যে কবি নিজেকে রাজা ভাবেন। যেমন: ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে।’ এ উক্তিটি যে কবি করেছেন তিনি সম্ভবত একজন কবিরাজ।
কোণঠাসা: অস্বস্তিকর জ্যামিতিক পরিস্থিতি, যেখানে সূক্ষ্মকোণ, সমকোণ, স্থূলকোণ ইত্যাদি ধরনের কোণ দিয়ে তৈরি গাণিতিক সমস্যা থাকে।
বাক্য গঠন: আজকের ম্যাথ প্রশ্ন এত কঠিন ছিল, একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছি।
কর্মফল: ক্লান্তি, অবসন্নতা ইত্যাদি। যেকোনো কর্মসাধনের পরপরই এসব কর্মফল পাওয়া যায়।
কপিকল: কপি করার কল। যেমন: ফটোকপি মেশিন, স্ক্যানার ইত্যাদি।
কারবারি: গাড়ি (কার) ও বাড়ি হয় যার মাধ্যমে। যেমন: চোরাকারবারি বলেই তো ওর আজ গাড়ি-বাড়ি হয়েছে।
কলোপ: ‘ক’ দূর হয় বা লোপ পায় যার মাধ্যমে। ধারণা করা যায়, এখানে ‘ক’ দ্বারা বিশেষ ধরনের শুভ্র কেশকে বোঝানো হয়।
কদাচার: একধরনের মুখরোচক আচার। সম্ভবত কদবেল দিয়ে তৈরি হয় বলে এ নামকরণ।
কমনীয়তা: স্বল্পতা। যেমন: তার কথায় কোনো কমনীয়তা নেই, সবকিছুই আগাগোড়া বলছে।
মাসুদুল হক
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০০৯
Leave a Reply