সম্প্রতি নতুন রোগ হিসেবে সোয়াইন ফ্লুর আগমন ঘটেছে। এরই মধ্যে অনেকে নবীন রোগ হিসেবে বরণ করে নিয়েছে সোয়াইন ফ্লুকে। তা ছাড়া ফেইসবুক এডিকশন ডিজ-অর্ডার নামে আরেকটি নবীন রোগ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ অবস্থায় রস+আলো তো আর বসে থাকতে পারে না। তাই আরও কিছু নতুন রোগ আবিষ্কার করেছেন আদনান মুকিত।
রি-ট্যালেন্ট হান্ট ভাইরাস
এটি একটি ভয়াবহ সংক্রামক রোগ। সাধারণত টিভি চ্যানেলগুলোর কর্মকর্তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলেই এ ধরনের রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রোগে আক্রান্ত রোগী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অন্য গ্রহের এলিয়েনদের মধ্য থেকেও প্রতিভা অন্বেষণ করতে চায়।
কোনো প্রতিভা দেখলেই ‘এ ধরনের প্রতিভা সারা দেশে ছড়িয়ে আছে, কিন্তু সুযোগের অভাবে উঠে আসতে পারছে না’-এমনটা ভাবাই এ রোগের লক্ষণ। রোগী কারও প্রতিভা না থাকলেও তাকে প্রতিভাবান প্রমাণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে।
লেটনাইট টকশো অ্যাটেন্ডিং ডিজ-অর্ডার
টিভি চ্যানেলের টকশোগুলোয় সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক ঘটনা নিয়ে তুমুল বাকযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এ রোগের প্রধান কারণ। অতিরিক্ত কথা বলায় মস্তিষ্কের কথা থামানোর প্রোগ্রামটি আনইনস্টল হয়ে যায়, ফলে রোগী কথার ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। হঠাৎ করেই কেউ যদি নিজেকে অতিজ্ঞানী ভেবে সাধারণ বেগুন থেকে শুরু করে ভয়াবহ আগুন পর্যন্ত সব বিষয়ে একাই আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সে ‘লেটনাইট টকশো অ্যাটেন্ডিং ডিজঅর্ডার’ রোগে আক্রান্ত। এতে আক্রান্ত হলে রোগী অন্য কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে একাই বকবক করে যাবে।
লাইটফোবিয়া
মারাত্মক এই রোগের রোগীর সংখ্যা দেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকাই এ রোগের প্রধান কারণ।
আক্রান্ত রোগী টিউব লাইটসহ সাধারণ ২৫ ওয়াটের বাল্বের আলোও সহ্য করতে পারে না। আলো জ্বালালে রোগী চোখ বন্ধ করে ১, ২, ৩ গুনতে থাকে এবং মোমবাতি জ্বালাতে বলে। মোমবাতি বা হারিকেনের আলো জ্বললে রোগী শান্ত হয়। এবং সবাইকে দু-এক ঘণ্টা ধৈর্য ধরতে বলে ঝিম মেরে পড়ে থাকে। তবে এ রোগটি ছোঁয়াচে নয়, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায় না।
সিরিয়াল ওয়াচিং সিনড্রোম
টিভিতে প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়ালের (যেমন কাহানি কাউ কাউ কি) প্রতি তীব্র আকর্ষণ এ রোগের প্রধান ও একমাত্র কারণ।
নিয়মিত স্টার প্লাস, সনি-এই চ্যানেলগুলো দেখা এবং নিজেকে এই সিরিয়ালের একজন ভাবা এ রোগের লক্ষণ। রোগ প্রকট আকার ধারণ করলে রোগী অন্য কোনো চ্যানেল দেখে না এবং কোনো কারণে দেখতে না পারলে টিভির রিমোট ভাঙচুর করে। সিরিয়ালের কাহিনী অন্যের কাছে নিজের ঘটনার মতো বর্ণনা করা এবং সে রকম পোশাক পরা ও মেক-আপ করাও এ রোগের লক্ষণ। সাধারণত নারীরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
জ্যামেনজাইটিস
এটি অত্যন্ত মারাত্মক একটি রোগ। দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকে থাকার কারণে এ রোগ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এখনো এ রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন।
রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেবে এবং রোগীর প্রেশার বেড়ে যাবে। রোগী হঠাৎ দাঁড়িয়ে সামনে কী আছে তা দেখার চেষ্টা করবে এবং বাসে থাপড় দেওয়ার মতো করে হাতের কাছে যা পাবে তাতে থাপড় মারবে। রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রোগী ট্রাফিক, সার্জেন্ট এবং সরকারবিরোধী গালিগালাজ করবে। রোগীর প্রচণ্ড পিপাসা পাবে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ৩১, ২০০৯
Leave a Reply