মধ্যরাত। বাঁশবাগানের পেছনে শ্মশানঘাটে আয়োজন করা হয়েছে জমকালো এক অনুষ্ঠানের। এই অনুষ্ঠানে প্রদান করা হবে ‘আহ্-মরণ সম্মাননা পুরস্কার’। সেই পুরস্কারের দাবিদার হিসেবে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন দেশের সব জ্ঞানী-গুণী আত্মা।
অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে শ্মশানঘাটে উপস্থিত হলেন সুকুমার রায়। সহাস্যে বললেন-
‘জানতে পেলাম ইন্টারনেটে
আজ রাত্রে শ্মশান ঘাটে,
অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে মোরে
তাই তো ছুটে এলাম তেড়ে।’
প্রতিবাদ জানান বিদ্রোহী কবি-
‘আমি হলাম আন্ধার রাইতের পাখি,
অ্যাওয়ার্ড নিবি তুই চশমু
মোরে দিয়া ফাঁকি?’
পেছনের সারিতে বসে থাকা জীবনানন্দ উঠে আসেন সামনে। শান্ত কণ্ঠে বললেন-
‘আমিও এসেছি ফিরে,
বাকি সব আত্মার ভিড়ে-এই শ্মশানে
বনলতার জন্য নয়, শুধু এই অ্যাওয়ার্ডের তরে;
তোরা না হয় অ্যাওয়ার্ড নিস আমি নেওয়ার পরে!’
কবিদের এই অন্তর্কোন্দলে শামিল
হন যতীন্দ্রমোহন বাবু।
‘বাঁশবাগানের মাথার উপর কাউয়া ডাকে ওই, সবাই অ্যাওয়ার্ড নিয়ে গেল আমার অ্যাওয়ার্ড কই?’
এমন সময় ‘হারে রে রে রে রে,
আমার অ্যাওয়ার্ড নিবি তোরা কেড়ে?
কবিদের মাঝে আমি কবিগুরু,
আমায় ফেলে অ্যাওয়ার্ড নেয়,
দেখি কোন গরু?’
বড়দের ভিড়ে এতক্ষণে মুখ খোলার
সুযোগ পেলেন তরুণ সুকান্ত-
‘শাবাশ, কবিগুরু
ভূতেরা অবাক তাকিয়ে রয়,
নোবেলখানা তুমি পেলেও
এই অ্যাওয়ার্ড তোমার নয়।’
কবিদের এই গলাবাজিতে অত্যন্ত রুষ্ট হলেন পল্লীকবি। বললেন-
‘এই বুড়োরা, এই ধাড়িরা
চুপটি করে থাক
চুপ থাকতে না পারলে
এখান থেকে ভাগ।’
ঠিক সেই সময় বাঁশঝাড়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসেছিল মকবুল। কান পেতে কিছুক্ষণ কবিদের এই ফিসফিসানি শোনার পর ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে পুরো গ্রাম মাথায় তোলে সে। ভয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাতাসে মিলিয়ে যায় সব আত্মা। শ্মশানঘাটে শুধু পড়ে থাকে ‘আহ্-মরণ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড’।
বর্ষণ সেন
নন্দনকানন, চট্টগ্রাম।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১০, ২০০৯
Leave a Reply