সেই যে এক ভালুক এক বন্ধুর কানে কানে বলেছিল, বিপদেই বন্ধুর প্রকৃত পরিচয়! ভালুক কীভাবে কানে কানে কথা বলেছিল, সে প্রশ্ন সেদিনও কেউ করেনি, আজও কেউ করছে না। প্রকৃত বন্ধু-সম্পর্কিত তেমনই কিছু গল্প শোনাচ্ছেন মেহেদী মাহমুদ আকন্দ
ওভারব্রিজ, চাকু ও দুই বন্ধু
দুই বন্ধু ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। হঠাৎ একজন লোক দুই হাতে দুই চাকু নিয়ে তাদের পথ আগলে দাঁড়াল। উল্টো দিকে ভোঁ দৌড় দিয়ে পালাতে গিয়ে একজন আছাড় খেয়ে পড়ল। অন্যজন হাতের ব্যাগ, পায়ের স্যান্ডেল ফেলে কোনো রকমে ওভারব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আছাড় খেয়ে পড়া লোকটি যখন নিচে নেমে এল, তখন ওভারব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া লোকটি রাস্তার পাশে বসে ব্যথায় চাপা চিৎকার করছে। বন্ধুকে দেখেই জিজ্ঞেস করল, কী খবর দোস্ত, ছিনতাইকারী কী করল, কী বলল? একগাল হেসে বন্ধুটি উত্তর দিল, উনি বললেন, চাকু বিক্রেতাকে ছিনতাইকারী ভেবে নিজের বন্ধুকে ফেলে ওভারব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রকৃত বন্ধুর কাজ নয়।
ফেইসবুক বন্ধু
ফেইসবুকে এক মেয়ের সঙ্গে খুব ভাব হয়েছে সোহেলের। তারপর একদিন সে তার বন্ধু তারেককে নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে পার্কে দেখা করতে গেল। অজানা আশঙ্কায় তার বুক দুরু দুরু কাঁপছে-কোনো ঝামেলা হবে না তো? ভাবতে ভাবতেই দেখা গেল, মেয়েটা হেঁটে হেঁটে আসছে। তার দুই পাশে হোমরাচোমরা দেখতে দুই তরুণ। তারেক কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোহেল ‘পালা, পালা’ চিৎকার দিয়ে দৌড় দিল। তারেক অনেক চেষ্টা করেও দৌড় দিতে পারল না, ভয়ে হাত-পা শক্ত হয়ে গেছে। মেয়েটা এসে ওর সামনে দাঁড়াল। লোক দুটো পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পরদিন দেখা হলে সোহেল তারেককে জিজ্ঞেস করল, ‘দোস্ত, মাইর কি বেশি পড়ছে? মেয়েটা কী কইল?’ মেয়েটি বলল, তোকে আজই ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেবে আর আমাকে অ্যাড করবে।
নকল(বাজ) বন্ধু!
রায়হানের জানে জিগার বন্ধু সাকিব। নকল করা এবং নকল করে ধরা পড়া উভয় কাজেই যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে সে। নকল করে ধরা পড়ার পর তার প্রতিক্রিয়াও ছাত্রছাত্রী মহলে বেশ নজর কেড়েছে। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে স্যার বা ম্যাডামের পায়ে ধরে একেবারে সোজাসুজি মেঝেতে শুয়ে পড়ে। মাফ না করা পর্যন্ত ছাড়ে না। একবার এক স্যার এর পরও মাফ করতে রাজি না হওয়ায় স্যারের পায়ে কামড়ে দিয়েছিল ও। যা হোক, ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। রায়হানের পেছনের সিটেই বসেছে সাকিব। যথারীতি চলছে নকল করা। বড়সড় একটা প্রশ্নের উত্তর লেখা প্রায় শেষ। এমন সময় ম্যাডাম এদিকেই আসছেন দেখে তড়িঘড়ি করে নকলটা সামনের দিকে ঢিল দিয়ে রায়হানের টেবিলে ফেলল সাকিব। ম্যাডাম এসে রায়হানের টেবিলে নকল পেয়ে ওর খাতা নিয়ে গেলেন। পেছন পেছন গেল রায়হান। অনেক কাকুতি-মিনতির পর ম্যাডাম ২০ নম্বর মাইনাস করে খাতা ফেরত দিলেন। রায়হান নিজের সিটে এসে বসলে সাকিব জিজ্ঞেস করল, কী রে, ম্যাডাম তোকে কী বললেন রে? রায়হান জবাব দিল, ম্যাডাম বললেন, সঠিক উত্তরপত্র সরবরাহকারী বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। যে প্রশ্নের উত্তরপত্র আমার কাছে পাওয়া গেছে, সে প্রশ্ন নাকি আজকের পরীক্ষায় আসেইনি।
ভালুক নয়, চিতা বাঘ
দুই বন্ধুকে তাড়া করেছে এক চিতা বাঘ। কিছুতেই ওদের সঙ্গে পেরে উঠছে না বাঘটি। একটু পরই দুই বন্ধুর একজন হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি না পেয়ে মরার ভান করে পড়ে রইল সে। অন্য বন্ধুটি যথারীতি গাছের মগডালে উঠে পড়ল। চিতা বাঘ এসে দেখল, একজন মরার মতো পড়ে আছে। তারপর বুদ্ধিমান ওই চিতা বাঘ কোত্থেকে কোত্থেকে চামড়ার জুতা, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি এনে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করল। তখন মগডালে বসে থাকা বন্ধু মরার ভান করে পড়ে থাকা বন্ধুর মোবাইলে ফোনে জিজ্ঞেস করল, ‘চিতা বাঘ তোর কানে কানে কী বলল?’ সে উত্তর দিল, ‘বাঘ বলল, চিতা বাঘ কিন্তু গাছেও উঠতে পারে।’
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৭, ২০০৯
Leave a Reply