লতিফ সাহেব অফিসে সব সময় লেট করেন। তবে ঘটনাটা কিন্তু তাঁর নামের কারণে নয়। কীভাবে কীভাবে যেন লেট হয়ে যায়। প্রতিবারই তাঁর বস জিজ্ঞেস করেন-
কী লতিফ সাহেব, আজকের লেট হওয়ার গল্পটা কী?
স্যার, আমি ঠিক দুই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বেরোলাম। আগে থেকেই একটা সিএনজি রেডি করে রেখেছিলাম, যাতে আজ আর লেট না হয়। তারপর রওনা দেব··· সেই মুহূর্তে স্ত্রী বলল, ‘এক মিনিট ওয়েট করো, আমি তৈরি হয়ে আসি। আমাকে একটু রাপা প্লাজা নামিয়ে দিয়ে যেয়ো···।’ আমি ওর জন্য এক মিনিট ওয়েট করলাম। তারপর দুজন একসঙ্গে বেরোলাম। পথে দেখি স্যার, ‘বানর-বন্ধন’।
মানে?
মানে এত দিন মানুষেরা ‘মানববন্ধন’ করেছে, এবার দেখি ঢাকা শহরের সব বানর রাস্তা ব্লক করে ‘বানর-বন্ধন’ করে দাঁড়িয়ে আছে!
ফাজলামো করেন মিয়া? ঢাকা শহরে বানর পেলেন কোথায়?
কী বলেন স্যার, পুরান ঢাকায় গিয়ে দেখেন, এখনো ছাদে ছাদে অনেক বানর দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাই সব দলবেঁধে সংসদ ভবনের সামনে বানর-বন্ধন করেছে।
তাদের দাবি কী?
তাদের দাবি, সংসদ ভবনের ওপর মোবাইল টাওয়ার কেন? সংসদ ভবন পৃথিবীর দশটা বিখ্যাত স্থাপত্যের একটি। এর ওপর কেন টাওয়ার থাকবে? আপনি কি স্যার তাজমহলের ওপর কোনো মোবাইল টাওয়ার চিন্তা করতে পারেন?
তাতে বানরদের সমস্যা কী?
ওরা তো স্যার, আফটার অল আদি মানব··· কেন স্যার, আপনি ডারউইন পড়েননি? ওদের ফিলিংস···
শাট আপ!! বস আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না।
কেন স্যার? আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না?
না, এটা সর্বৈব মিথ্যা!
স্যার, আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না যে ঢাকার বানরেরা বানর-বন্ধন করতে পারে?
তা হয়েছে, তবে··· ওই যে বললেন আপনার স্ত্রী এক মিনিটে রেডি হয়ে এলেন, এটা সর্বৈব মিথ্যা··· চাপা! মেয়েরা কখনো এক মিনিটে রেডি হতে পারে না··· নেভার এভার! ঠিক আছে যান··· কাজ করেন। আপনাকে শেষ ওয়ার্নিং দিলাম। এরপর লেট করলে আমি আপনাকে ফায়ার করব।
পরদিন যথারীতি দেড় ঘণ্টা দেরি করে এলেন আব্দুল লতিফ। বস ডেকে পাঠালেন। থমথমে মুখ।
আজকের লেট হওয়ার গল্পটা কী?
স্যার, বিশ্বাস করবেন কি না জানি না। অফিসে যাতে দেরি না হয়, সে জন্য গতকাল আমি বাসায় যাইনি। অফিসের কাছের একটা গলির মোড়ে হোটেলে ছিলাম। তো সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে গলির মোড়ে এসে দাঁড়ালাম···দেখি গ্যালিলিও।
মানে?
মানে সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি। তিনি আমার কাছে একটু হেল্প চাইলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্টটা করতে চান, সেই যে পাখির পালক আর লৌহখণ্ড পিসার টাওয়ার থেকে ফেলেছিলেন··· দুটো একই সঙ্গে এসে নিচে পড়ে··· মাধ্যাকর্ষণের টানে··· সেই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট তিনি বাংলাদেশে করতে চান। বোঝেন স্যার, কত বড় মানুষ! তাঁকে না করি কীভাবে। তিনি বললেন, আমাকে একটা উঁচু টাওয়ারে নিয়ে যাও··· তাঁর হাতে সময় কম। কী করি। একটা সিএনজি নিলাম মিটারে···তারপর দুজন ছুটলাম শিল্প ভবন। ২৪ তলার ছাদে উঠলাম। মহামান্য গ্যালিলিও পকেট থেকে একটা বার্গার আর পালক বের করলেন। আমি বললাম, ‘পালক ঠিক আছে কিন্তু বার্গার কেন?’
তোমাদের এখানে লোহা পেলাম না··· আর এই বাসি বার্গারটা লোহার চেয়েও শক্ত!
যা হোক, তিনি দুটোই ২৪ তলার ছাদ থেকে ছুড়ে দিলেন। আর তখনই আমার মাথায় ক্লিক করল। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘স্যার, আপনার পরীক্ষা বাংলাদেশে ভুল প্রমাণিত হবে।’
কেন?
পালক আর বার্গার একসঙ্গে পড়বে না। বার্গার আগে পড়বে!
কেন?
কারণ বার্গার যে ফাস্টফুড!!
শাট আপ!! ··· না পাঠক, গ্যালিলিও ধমক দিলেন না, দিলেন লতিফ সাহেবের বস!
স্যার, আপনি গল্পটা বিশ্বাস করলেন না?··· আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না যে গ্যালিলিও গ্যালিলি ঢাকায় এসেছিলেন এবং আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে?
সেটা বিশ্বাস করেছি।
তাহলে?
ওই যে বললে, মিটারে সিএনজি নিয়ে গেলে। এটা সর্বৈব মিথ্যা!! যাও, ইউ আর ফায়ার্ড··· গেট আউট।
চাকরি হারিয়ে আব্দুল লতিফ একটা পার্কে এসে বসলেন। মনটা খারাপ, সত্যি সত্যিই চাকরিটা গেল। এখন কী করা। তবে কি নামটা বদলে ফেলবেন? আসলে এখন মনে হচ্ছে, নামের কারণেই সবকিছুতে লেট হয়ে যাচ্ছে··· উল্টাপাল্টা হচ্ছে। কী করা? এসব নয়-ছয় যখন ভাবছিলেন, তখন হুড়মুড় করে বৃষ্টি নামল। আষাঢ় মাসের বৃষ্টি ··· তিনি কাকভেজা হয়ে বসে রইলেন। তখনই তাঁর চোখ গেল ঘড়িতে! আরে, কী আশ্চর্য! তাঁর দামি সুইডিশ ঘড়ি তো সব সময় ২৪ ঘণ্টা ফার্স্ট ···এত দিন খেয়ালই করেননি। তার মানে তিনি কখনোই লেট করেননি বরং এক দিন আগে অফিস করেছেন। এত দিন কেউ বুঝতে পারেনি···তিনি ছুটলেন অফিসে, বসকে বিষয়টা বোঝাতে হবে। অবশ্য ঘাউড়া বস বুঝলে হয়!!
আহসান হাবীব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০০৯
Leave a Reply