সোবাহান সাহেব এসেছেন এনার্জি সেভিং বাল্ব কিনতে। দোকানদার তাঁকে বলল।
-ভাই, কত ওয়াটের দেব?
-আমার একটু বেশি ওয়াট লাগবে। ৫০০ থেকে ১০০০ ওয়াট হলেই ভালো হয়।
-তত বোধহয় পারব না। আচ্ছা, আপনি এই বাতি লাগাবেন কোথায়?
-আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
-কিসের ব্যবসা আপনার?
-আইপিএসের।
-কী বলছেন আবোল-তাবোল! বাংলাদেশে এখন আর কেউ আইপিএসের ব্যবসা করে নাকি?
-ভাই, বাংলাদেশে বিদ্যুৎব্যবস্থার এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, তা আমরা ভাবতেও পারিনি।
-ঠিক বলেছেন ভাই, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা হঠাৎ করেই তাপবিদ্যুৎ আবিষ্কার করলেন। আর তাতে দেশজুড়ে বিদ্যুতের খাম্বাগুলো কেমন কাজে এল দেখেছেন?
-আরে ভাই, যখন এই খাম্বাগুলো বসানো হয়, তখন তো দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে গেল। সবাই বলছিল, হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু খাম্বা বসিয়ে দেশের ক্ষতি হয়েছে ইত্যাদি, ইত্যাদি। আসলে ভাই, কারও ভালো করতে নেই। এখন দেখুন, এই খাম্বাগুলো রোদে গরম হচ্ছে। আর গরম খাম্বা থেকে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা এখন আমেরিকাতেও বিদ্যুৎ রপ্তানি করছি। আর এই সময়ে কিনা আপনি আইপিএসের ব্যবসা করছেন?
-করছি না তো। একসময় আইপিএসের সিরিয়াল নিতেও মানুষ লাইন দিত। আর এখন তো ব্যবসায় লালবাতি জ্বালানো ছাড়া গতি নেই। আপনার কাছে ১০০০ ওয়াটের লালবাতি থাকলে দিন। কোম্পানির গেটে লাগাব। দূর থেকেও যেন বোঝা যায় আইপিএসের ব্যবসায় লালবাতি।
-আপনি বরং একটা লাল ফ্লাড লাইট নিয়ে যান। এমন সময় রাস্তাজুড়ে বিশাল ব্যান্ড পার্টি আসতে দেখা গেল। সোবাহান সাহেব বললেন, এরা কারা?
-এটা ঢাকা সিটি করপোরেশনের আনন্দ মিছিল। বাংলাদেশ অলিম্পিক সাঁতারে গোল্ড মেডেল পেয়েছে, তাই।
-কিন্তু বিজয় মিছিল তো ক্রীড়া পরিষদের করা উচিত। আরে না, গোল্ড মেডেল পাওয়া সাঁতারু কী বলেছেন শোনেননি? তাঁর এই বিজয়ের পেছনে সবটুকু অবদান ঢাকা সিটি করপোরেশনের। ঢাকার জলাবদ্ধতা এখন এমন পর্যায়ে যে শীতকালেও রাস্তায় পানি জমে থাকে। আর তাই তিনি অফিসে যেতেন সাঁতার কেটে, অফিস লেট হওয়ার ভয়ে তিনি দ্রুত সাঁতার কাটতেন। ঢাকার জলাবদ্ধতা না থাকলে তাঁর সাঁতার শেখাই হতো না। তাই জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কাছে কৃতজ্ঞ।
-আচ্ছা, আমার লালবাতির দাম রাখুন।
-ভাই, একটা অনুরোধ। আপনার কাছে কালো টাকা থাকলে প্লিজ, কালো টাকা দিন।
-না রে ভাই। আমার সব টাকাই সাদা।
ইস, দেশে এখন কালো টাকার এত্ত কদর! অথচ কোনোভাবেই আমি কালো টাকা জোগাড় করতে পারছি না।
দেশে কালো টাকার মালিকেরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কালো টাকার মালিক সরকারি রেশন পান, মাসিক ভাতা পান, তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও ফ্রি। তাঁদের বউয়েরা প্রতি মাসে একবার সরকারি খরচে বিদেশে শপিংয়েও যান। তাই কালো টাকা না থাকার দুঃখে তারা দুজনেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মারুফ রেহমান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৩, ২০০৯
Leave a Reply