নবীনবাবু খেতে বসেছেন। নবীনবাবুর আবার খাওয়ার শেষে একটু দই খাওয়ার অভ্যেস। দইয়ের ভাঁড়টা কিরণবালা পাতের পাশে রেখে যেতেই বাড়ির পোষা বিড়ালটা মুখ দিল।
সে দই খাওয়া চলে না, তাই কিরণবালা বাড়ির চাকর হাবুলকে ডেকে তার হাতে একটি টাকা দিয়ে বললেন, ‘সামনের দোকান থেকে এক টাকার দই নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। দেরি করিসনে।’
‘আচ্ছা। দেরি হবে কেন? এই আমি যাব আর আসব।’ গেট পর্যন্ত গিয়ে হাবুল দাঁড়িয়ে পড়ল। সেখান থেকে চেঁচিয়ে বলল, ‘মিষ্টি দই আনব?’
কিরণবালা চেঁচিয়ে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ।’
হাবুল সেই গেল, আর তার দেখা নেই। হাত চেটে চেটে একসময় উঠে পড়লেন নবীনবাবু। দই খাওয়া তাঁর হলো না।
বিকেল চারটার সময় যখন নবীনবাবু ঘুম থেকে উঠেছেন, হাবুল তখন ফিরল খালি হাতে।
‘কী ব্যাপার? এত দেরি হলো কেন?’ নবীনবাবু শুধোলেন।
হাবুল বলল, ‘সামনের দোকানে মিষ্টি দই ছিল না। তাই ওরা বলল, শ্যামবাজার পাবি মিষ্টি দই। এত বেলায় ওখানে ছাড়া কোথাও মিষ্টি দই পাওয়া যাবে না। এই রাধাবাজার থেকে শ্যামবাজার যেতে বাস ভাড়া পঞ্চাশ পয়সা লাগল। বাকি পঞ্চাশ পয়সার মিষ্টি দই দেবে না দোকানি। তাই ফিরে এলাম বাবু পয়সা নিতে।’
হাবুলের গলা শুনে কিরণবালা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘তোর আর মিষ্টি দই আনতে হবে না। বাকি পঞ্চাশ পয়সা ফেরত দে আমাকে? হতচ্ছাড়া পাজি ছেলে।’
হাবুল বলল, ‘শ্যামবাজার থেকে বাসে ফিরতে সে পয়সাও তো বাস ভাড়ায় গেছে। হেঁটে এলে তো আরও দেরি হতো ফিরতে।’
কিরণবালা বললেন, ‘বুদ্ধির ঢেঁকি। যা, চান করে খেয়ে নে। আমাকে উদ্ধার কর খেয়ে নিয়ে।’
নবীনবাবু বললেন, ‘আহা, অত রাগ করছ কেন। ওর যদি অত বুদ্ধি থাকত, তাহলে তো অফিসেই চাকরি করত।’
হাবুল চান করে খেতে বসল। সে বুঝতেই পারল না তার অপরাধ কোথায়!
কিরণবালার কোমরের যন্ত্রণাটা কদিন হলো বেড়েছে। রাতে মোটেই ঘুমুতে পারেন না। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। ওষুধ আনা না হলে উপায় নেই!
নবীনবাবু বললেন, ‘হাবুলকে পাঠাও না। ও ঠিক আনতে পারবে। আচ্ছা দাঁড়াও, আমিই ওকে বুঝিয়ে বলে দিচ্ছি।’
কিরণবালা বললেন, ‘তাই দাও। আমার শরীরের যা অবস্থা, তাতে ডাক্তারখানা পর্যন্ত যাওয়া খুবই কষ্টকর।’
নবীনবাবু হাবুলকে ডেকে ওর হাতে পাঁচটি টাকার একখানি নোট দিয়ে বললেন, ‘ডাক্তারবাবু যে ওষুধ লিখে দেবেন, সেই কাগজখানা ওষুধের দোকানে দেখাবি, বলবি, যা দাম লাগে কেটে নিয়ে বাকি পয়সা এই রুমালে বেঁধে দিন।’
‘আচ্ছা’, বলে হাবুল চলে গেল।
ডাক্তারবাবু সব শুনে ওষুধ দিলেন এক শিশি। বললেন, ‘দাম এখন দিতে হবে না। দিনে চারবার খাবেন এই ওষুধ। প্রতিবারে দুচামচ করে। বুঝলি? দুদিনের ওষুধ দিলাম। পরশু এসে বলবি কেমন থাকেন।’
হাবুল বাজার থেকে ষোলখানা চামচে কিনে বাড়ি ফিরল। ওষুধ আর চামচেগুলো দিল কিরণবালাকে।
কিরণবালা ওষুধ আর ষোলখানা চামচে দেখে চমকে উঠে বললেন, ‘এত চামচে আনলি কেন রে?’
‘ডাক্তারবাবু বলেছেন।’
‘ডাক্তারবাবু বলেছেন! কেন? অতগুলো চামচে দিয়ে কী হবে?’
হাবুল বলল, ‘দিনে চারবার ওষুধ খাবেন। প্রতিবারে দু-চামচ করে। ওষুধ হলো দুদিনের। তা হলে ষোলখানা চামচেই তো লাগবে। আমি ষোলখানাই এনেছি। বেশি চামচে আনলাম কোথায়?’
রঞ্জিতবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০০৯
Leave a Reply