পপতারকা মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে সাংস্কৃতিক জগৎ সব সময় সরব। বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নন্দিত হওয়ার পাশাপাশি নানা ঘটনায় তিনি নিন্দিতও কম হননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, সবকিছু মিলিয়ে দিলখোলা এক সরল মানুষ ছিলেন তিনি। আজব যত খেয়ালে গা ভাসানো এই সংগীত তারকার ভেতর বাস করত সুন্দর একটি শিশু।
২০০২ সালের ঘটনা। নিউইয়র্কের রেডিও সিটি মিউজিক হলে এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের পুরস্কার বিতরণ চলছে। টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে অনুষ্ঠান। একপর্যায়ে জনপ্রিয় পপতারকা ব্রিটনি স্পিয়ার্স মঞ্চে আমন্ত্রণ জানালেন তারকাদের সারিতে বসে থাকা মাইকেল জ্যাকসনকে। ব্রিটনির উদ্দেশ্য ছিল কেক কেটে জ্যাকসনের ৪৪তম জন্মদিন উদ্যাপন করা। জ্যাকসনকে আমন্ত্রণ জানানোর সময় ব্রিটনি তাঁকে ‘আর্টিস্ট অব দ্য মিলেনিয়াম’ (সহস্রাব্দের শিল্পী) বলে অভিহিত করেন।
সরলমতি জ্যাকসন ভাবলেন, পুরস্কারের আয়োজকেরা বিগত হাজার বছরের মধ্যে সবচেয়ে সেরা শিল্পী নির্বাচিত করে তাঁকে আর্টিস্ট অব দ্য মিলেনিয়াম সম্মানে ভূষিত করেছেন। আনন্দে একেবারে অভিভূত হয়ে পড়লেন জ্যাকসন। উপস্থিত তারকা এবং টিভির পর্দায় চোখ রাখা বিশ্বের অগণিত দর্শকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে কি, আমি যখন ছোট ছিলাম, মানে ইন্ডিয়ানায় বড় হচ্ছিলাম, তখন যদি কেউ আমাকে বলত, আমিই একদিন আর্টিস্ট অব দ্য মিলিনিয়াম অ্যাওয়ার্ড পাব, কিছুতেই বিশ্বাস করতাম না।’ এ সম্মাননা পাওয়ার জন্য জ্যাকসন ঈশ্বর, মা-বাবা ও জাদুকর ডেভিড ব্লেইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৯৯১ সালের কথা। মাইকেল জ্যাকসনের মাথায় হকার সাজার ভূত চাপল। এ জন্য আজব এক সাজ নিলেন তিনি। ঢলঢলে সুট পরে, মাথায় পরচুলা চাপিয়ে, গালে দাড়ি লাগিয়ে, চোখে রোদচশমা এঁটে বাড়ি বাড়ি পত্রিকা বিলি করতে বেরোলেন তিনি। কোন পত্রিকা? ওয়াচটাওয়ার নামে এক সাময়িকী। কিন্তু এক বাড়ির পোষা কুকুর জ্যাকসনের এই আজব সাজ পছন্দ করল না। ঘেউঘেউ করে পপতারকার দিকে ধেয়ে গেল কুকুরটা। আর জ্যাকসনও মারলেন ঝেড়ে দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতেই তিনি তাঁর আজব পোশাক খুলে ফেললেন। সেই সঙ্গে তাঁর হকার সাজার ভূতও নেমে গেল।
একবার একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকায় খবর বের হলো, জ্যাকসন গুরুতর অসুস্থ। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন-এমন ছবিও ছাপা হলো। সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্র প্রতিবাদ জানালেন জ্যাকসন। জোর গলায় তিনি দাবি করলেন, রোগবালাই কিছুই হয়নি তাঁর। তিনি দিব্যি সুস্থ। আর ওই ছবি তিনি একজন সাংবাদিকের কথামতো ভঙ্গিতে তুলেছেন। তবে তাঁর ভুলটি ছিল, এ ছবি ছাপার অনুমতিও তিনি দিয়েছিলেন।
মাইকেল জ্যাকসনের কাছে একবার তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের দাওয়াত এল। তিনি সানন্দে দাওয়াত কবুল করে যথাসময়ে হোয়াইট হাউসে গিয়ে হাজির হলেন। সেখানে তাঁকে যে আনুষ্ঠানিক সম্মান জানানো হয়, এতে তিনি গর্বিত না হয়ে বরং ঘাবড়ে যান। হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোমেটিক রিসেপশন কক্ষে যখন তিনি পা রাখেন, এতই বিচলিত হয়ে পড়েন যে একদৌড়ে তিনি একটি বাথরুমে গিয়ে লুকান। আর সেটি স্বয়ং প্রেসিডেন্টের বাথরুম।
১৯৭৭ সালের এক সন্ধ্যা। ম্যানহাটনের একটি দামি ফরাসি রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করতে গেছেন জ্যাকসন। সঙ্গে একজন সাংবাদিক। জ্যাকসনের পেটে তখন প্রচণ্ড ক্ষুধা। এসব রেস্তোরাঁয় সবাই কমবেশি কেতাবি নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু ক্ষুধার সময় এসব নিয়ম মানে কে। অন্তত জ্যাকসন নন। তিনি গলায় ন্যাপকিন ঝোলালেন ঠিকই, কিন্তু খাবার আসামাত্র কাঁটাচামচ ও ছুরির ধার না ধেরে হাত দিয়েই গপাগপ সাবাড় করতে লাগলেন সব খাবার।
২০০২ সালের আরেকটি ঘটনা। নভেম্বরে বার্লিন সফরে গেছেন জ্যাকসন। সেখানকার বিলাসবহুল অ্যাডলন হোটেলে ওঠেন তিনি। ওই হোটেলের চতুর্থ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি নিচে সমবেত অগণিত ভক্তের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি এক হাতে তাঁর শিশুপুত্র দ্বিতীয় প্রিন্সকে কয়েক সেকেন্ড নিচে ঝুলিয়ে আবার ফিরিয়ে নেন। শিশুটি তাঁর হাত ফসকে পড়ে গেলেই হয়েছিল আর কি! কিন্তু জ্যাকসন এ কাণ্ড করে বুঝিয়ে দেন, শিশুরা তাঁর হাতে কতটুকু নিরাপদ। সেবার শিশুদের প্রতি অশেষ দয়া প্রদর্শনের জন্য একটি পুরস্কার নিতেই জ্যাকসন জার্মানি সফর করেন।
অব দ্য ওয়াল অ্যালবাম তৈরি করার সময় নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন জ্যাকসন। একটানা কয়েক দিন গোসল না করায় তাঁর গা দিয়ে কটু গন্ধ বের হচ্ছিল। এতে অ্যালবামের প্রযোজক কুইন্সি জোনস তাঁকে আড়ালে ‘্নেলি’ বলে ডাকতে শুরু করেন, যার অর্থ দাঁড়ায় ‘দুর্গন্ধময়’। এ কথা একসময় তরুণ জ্যাকসনের কানে যেতেই তাঁর মাথা গরম হয়ে যায়। জোনসকে পাকড়াও করে জ্যাকসন বলেন, ‘আপনি নাকি আমাকে ্নেলি বলে ডাকেন?’ চতুর জোনস উপস্থিত বিপদ কাটাতে চট করে বলেন, “আরে, তুমি তো ভুল বুঝছ আমাকে। ‘কুল’ শব্দটার একটি প্রচলিত রূপ হচ্ছে ‘্নেলি’। তুমি খুব ঠান্ডা স্বভাবের কিনা, তাই এ সম্বোধন করি।”
শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
কয়েকটি ওয়েবসাইট অবলম্বনে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৬, ২০০৯
Leave a Reply