স্কুল-কলেজে আমরা নানা প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে নানা সময় নানা প্রকারের দরখাস্ত লিখেছি। এসব দরখাস্তের অনেকটাতেই সত্যিকারের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। যদি সত্যিকারের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে দরখাস্ত লেখা হতো, তাহলে দরখাস্তগুলো কেমন হতো? চলুন দেখা যাক। ভেবেছেন মেহেদী মাহমুদ আকন্দ
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক
খাই খাই উচ্চবিদ্যালয়
বিষয়ঃ ক্যান্টিন স্থাপনের আবেদন।
স্যার,
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো ক্যান্টিন নেই। ফলে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। স্কুলের পাশের বাড়ির আমগাছ থেকে আম চুরি করার পর আম কাটার জন্য ছুরি-বঁটি পাওয়া যাচ্ছে না, তেঁতুল গাছ থেকে তেঁতুল চুরি করার পর লবণ পাওয়া যাচ্ছে না ইত্যাদি।
এমতাবস্থায় স্কুলের ছাত্রদের এজাতীয় সব সমস্যার সমাধানকল্পে অবিলম্বে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ক্যান্টিন স্থাপনে সুআজ্ঞা হয়।
বিনীত নিবেদক
খাই রুল
দশম শ্রেণী।
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক
সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়
বিষয়ঃ নতুন সময়ে স্কুল পরিচালনার আবেদন।
স্যার,
আপনি অবগত আছেন যে বর্তমান সরকার ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে এনেছে, কিন্তু আমাদের স্কুলে এখনো আগের সময়েই ক্লাস হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের প্রতিবেশী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে ক্লাসের সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে এনেছে। ফলে তাদের স্কুল এক ঘণ্টা আগেই ছুটি হয়ে যাচ্ছে। এতে আমি সঠিক সময়ে গার্লস স্কুলের গেটে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছি।
এমতাবস্থায় সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে এবং আমার সুবিধার্থে নতুন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কুলের সময় নির্ধারণের আবেদন জানাচ্ছি।
নিবেদক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
বরাবর,
প্রিন্সিপাল
হিমাগার বেসরকারি কলেজ
বিষয়ঃ স্কুল লাইব্রেরিতে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন রাখার আবেদন।
স্যার,
আপনি জানিয়া অত্যন্ত প্রীত হইবেন যে আমি অত্যন্ত শৌখিন একজন ছাত্র এবং আমার প্রিয় শখ হচ্ছে নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকার ছবিসংবলিত পেপার কাটিং সংগ্রহ করা। কিন্তু আমাদের লাইব্রেরিতে বর্তমানে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন না থাকায় আমার বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে।
এমতাবস্থায় আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন, অবিলম্বে স্কুল লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিন এবং বিশেষ করে রঙিন পত্রিকা ও ম্যাগাজিন রাখিতে সুআজ্ঞা হয়।
বিনীত নিবেদক
লাল মিয়া
দ্বাদশ শ্রেণী।
বরাবর,
প্রিন্সিপাল
চান্স টেক কলেজ
বিষয়ঃ শিক্ষাসফর আয়োজনের আবেদন।
স্যার,
বিনীত নিবেদন এই প্রতিদিনকার একঘেয়ে ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষণ ইত্যাদিতে কলেজের ছাত্ররা যারপরনাই ত্যক্ত-বিরক্ত। এমতাবস্থায় একটি শিক্ষাসফরের আয়োজন করা অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। শিক্ষাসফর উপলক্ষে অন্তত তিন দিন ছুটি পাওয়া গেলেও ঘরে বসে তিন দিন ঘুমানো যায়।
এমতাবস্থায় বাসায় বসে বিশ্রাম নেওয়া এবং ঘুমানোর সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি শিক্ষাসফরের আয়োজন করিতে সুআজ্ঞা হয়।
বিনীত নিবেদক
সুযোগসন্ধানী সুজন
দ্বাদশ শ্রেণী।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০০৯
Leave a Reply