কোনো এক দার্শনিকপ্রবর নাকি রাতে বাসায় ফিরে হাতের ছড়িটিকে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিলেন। আর ভদ্রলোক নিজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে সারা রাত ছড়ির জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন!
এত বড় ভুল করাটা বাড়াবাড়ি! তবে মানুষই ভুল করে। আর ক্রিকেটার, আম্পায়ার ও কর্মকর্তারা যেহেতু মানুষ তাঁদেরও কিঞ্চিৎ ভুলের নজির আছে।
১৮৩১ সালে ইংল্যান্ডে ‘জেন্টলম্যান’ বনাম ‘প্লেয়ার’ দলের মধ্যে একটি ম্যাচের ঘটনা। তখন নিজের দলের সব খেলোয়াড়কে সবাই ঠিকমতো চিনতেন কি না সন্দেহ। জেন্টলম্যান দলে খেলার জন্য চিঠি পাঠানো হলো মিলস নামের এক খেলোয়াড়ের কাছে। মিলসরা ছিলেন দুই ভাই। এক ভাই ক্রিকেট খেলতেন আর এক ভাই খেলতেন না। চিঠিতে শুধু ‘মিস্টার মিলস’ লেখা ছিল, তাই যে ভাই ক্রিকেট জানতেন না তিনিই চলে এলেন খেলতে!
প্রায় একই ধরনের একটা গোলমাল লেগেছিল ১৮৯০ সালে ইংল্যান্ড সফরে আসা অস্ট্রেলিয়া দলে। নির্বাচকেরা তাসমানিয়ার ই জে কে বার্ন নামের এক খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচন করেছেন বিকল্প উইকেটরক্ষক হিসেবে। বার্নও দিব্যি জাহাজে চেপে বসেছেন। জাহাজ ছেড়ে দিল। তখন আলাপ-আলোচনায় বার্ন বললেন, তিনি জীবনে কোনো দিন উইকেটরক্ষণ করেননি! স্রেফ ভুল করে আরেক বার্নের চিঠি চলে গেছে তাঁর কাছে!
এটুকুও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু ভুল করে কি কেউ আউট হতে পারে? আজকাল পারুক আর না-ই পারুক, সেই ১৮৭০ সালে ওভালে সারে বনাম এমসিসি ম্যাচে ভুল করে আউট হয়েছিলেন জে সাউদারটন। ভদ্রলোক ভেবেছিলেন উইকেটরক্ষকের ধরা বলটা তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। এ চিন্তায় বোলার আবেদন করার আগেই উইকেট ছেড়ে চলে গেলেন সাউদারটন।
আজকের দিনের আইন অনুযায়ী এ রকম ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যানকে আম্পায়ার ফিরিয়ে আনার কথা। কিন্তু এ আইন তখন ছিল না। তাই সাউদারটন আউটই হলেন। কিন্তু স্কোর কার্ডে কী লেখা হবে? অসহায় স্কোরার লিখে রেখেছিলেনঃ
জে সাউদারটন-অবসর, ভেবেছেন তিনি আউট-০
ভুল করে নয়, ইচ্ছা করে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার নজিরও আছে। ট্রেন্ট ব্রিজে বডিলাইনখ্যাত দুরন্ত ফাস্ট বোলার লারউডের (যার বলের আঘাতে অনেক ক্রিকেটারের হাসপাতালে যাওয়ার দুর্ভাগ্য হয়েছে) মুখোমুখি হয়েছিলেন ্নিথ নামের এক ৯ বা ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান। কোনোক্রমে একটা বল খেললেন, ক্যাচ উঠল, ফিল্ডার ধরলেন কি ধরলেন না। ্নিথ ব্যাট বগলদাবা করে হাঁটা শুরু করলেন। সঙ্গী ব্যাটসম্যান ডাক দিয়ে বললেন, ‘দাঁড়াও, যেয়ো না। ওটা তো ভালো ক্যাচ না, সম্ভবত ড্রপ ক্যাচ হয়েছে।’ ্নিথ ফিরে বললেন, ‘আউট হওয়ার জন্য ক্যাচটা হয়তো ভালো হয়নি, কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট ভালো হয়েছে।’
বাঁচানো মানে লারউডের হাত থেকে বাঁচানো। প্রায় একই রকম আরেকটা গল্প শোনা যায় এন এ নক্স নামের এক ফাস্ট বোলারের ক্ষেত্রে। কোনো এক ব্যাটসম্যান নাকি নক্সের বল খেলতে গিয়ে এতই ভয় পেয়েছিলেন যে ইচ্ছা করে স্টাম্প বাড়ি দিয়ে ফেলে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় সবাইকে উদ্দেশ করে বলে গিয়েছিলেন, ‘শুভ বিকেল, ভাইয়েরা। আমি গেলাম, বাড়িতে আমার জন্য কান্নার মতো বউ-ছেলে-মেয়ে কেউ নেই।’
এই দ্যাখেন। ভুলের গল্প ভুল করে কোথায় চলে গেছে। যাক গে। ভুল দিয়েই শেষ করা যাক। এবার আমাদের দেশি একটা ভুল।
কদিন আগের ঘটনা। দেশের ক্রীড়া বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন মানুষ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনুশীলন দেখতে গেছেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। গিয়েই আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, আমাদের সেই আশরাফি খেলোয়াড়টা কই?’
বাংলাদেশ দলে আশরাফুল আছে, মাশরাফি আছে। আশরাফিটা আবার কে! কিন্তু আশেপাশের লোকজন বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন ‘আশরাফি কে?’ কর্মকর্তা মহাবিরক্ত হয়ে বললেন, ‘ওই যে আশরাফি, আশরাফি। ভালো খেলে। অনেক টাকা দিয়ে আইপিএল না আইসিএল কারা জানি কিনেছে।’
ততক্ষণে সবাই বুঝে ফেলেছেন যে আশরাফি বলে আলাদা কেউ নেই। কর্মকর্তা আশরাফুল আর মাশরাফিকে মিলিয়ে ‘সংকর’ ক্রিকেটার তৈরি করেছেন! কিন্তু এখন উপায় কী? ‘আশরাফি’কে কীভাবে হাজির করা যায়।
এক ক্রিকেট কর্মকর্তা বুদ্ধি করে দুজনকেই নাকি ডেকে এনেছিলেন। ভাবখানা এমন-বেছে নিন আপনার আশরাফি!
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২৯, ২০০৯
Leave a Reply