মোবাইল ফোন কোম্পানি আমাদের নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু কিছু বিষয় অস্পষ্ট থেকেই যাচ্ছে। এসব সুবিধার অংশ হিসেবে তারা যদি এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করত-
বন্ধ নম্বরে ফোন করলে ‘এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’ বলেই তারা খালাস। কেন সম্ভব হচ্ছে না, সেটি তারা পরিষ্কার করতে পারত এসব বিষয় উল্লেখপূর্বক-
— তার চার্জার নষ্ট। চার্জ দিতে না পারায় মোবাইল ফোন বন্ধ। তাই সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
— তার কাছে বহু লোকে টাকা পায়। কোনো পাওনাদার ফোন করে কি না, এই ভয়ে বন্ধ রেখেছে। কীভাবে সংযোগ দিই!
— মোবাইল ফোনটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখেছে তো। চাপ লেগে কখন জানি বন্ধ হয়ে গেছে। টের পায়নি।
— তিন-চার রাত দাঁত ব্যথায় ঘুমাতে পারেনি। তাই এখন মোবাইল ফোন বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।
— তার মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে। চোরেরা সিমকার্ড খুলে ফেলেছে। আমরা কীভাবে সংযোগ দিই, বলুন।
আজকাল মোবাইল ফোন কোম্পানি যে বাড়তি সুবিধাটা দিচ্ছে, তা হচ্ছে দেখার সুবিধা। যেমন, অমুক চ্যানেলের খবর দেখার সুবিধা, অনুষ্ঠান দেখার সুবিধা ইত্যাদি। এ সেবার পরিধি বাড়ানো যায় এভাবে-
— ডায়াল করুন এবং দেখুন আপনার প্রেমিকা এখন কার সঙ্গে বসে চিনাবাদাম খাচ্ছে।
— ডায়াল করে দেখে নিন বাসায় রেখে আসা আপনার জামার পকেট থেকে আপনার বউ নোট সরানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না।
— ডায়াল করুন এবং দেখুন পাশের ঘরে আপনার সন্তান পড়ছে, নাকি টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমাচ্ছে, নাকি কাঁথার নিচে মাথা ঢুকিয়ে কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে ফুসুরফাসুর করছে।
— নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করে দেখুন আপনার মেয়ের বিয়েতে আসা মেহমানেরা চায়ের কাপ বা পানির গ্লাস পকেটে ঢোকাচ্ছে কি না।
— ডায়াল করে দেখে নিন, আপনার ফাইল এখন কোন টেবিলে, কোন অবস্থায় আছে।
কারও কাছে এসএমএস পাঠালেন। সেই এসএমএস যে গিয়ে পৌঁছেছে, সেই রিপোর্ট আসে। তবে যাঁর কাছে পাঠিয়েছেন, তিনি ঠিকঠাকমতো পড়েছেন কি না, সেটা জানা যায় না। মোবাইল ফোন কোম্পানি সেটা বিস্তারিত জানাতে পারে এভাবে-
— ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ায় আপনার এসএমএস তিনি পড়তে পারেননি পুরোপুরি। ডিকশনারি খুঁজছেন।
— চশমাটা পাচ্ছেন না। তাই পড়তে আরও কিছুক্ষণ বিলম্ব হতে পারে।
— সাইলেন্ট করা আছে মোবাইল ফোন। তাই আপনার এসএমএস এখনো টের পাননি।
— আপনার এসএমএস পড়তে গিয়ে ভুল বাটনে টিপ দিয়ে ভুল করে ডিলিট করে ফেলেছেন।
— আপনার পাঠানো এসএমএসটা তিনি পড়েছেন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে উত্তরও দেবেন, ওয়েট।
আপনি যাঁকে ফোন দিয়েছেন তাঁর নম্বর খোলা। তবু তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। কারণ ফোন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ফোনে লেখা উঠেছে ‘নম্বর বিজি’ অথবা ‘ওয়েটিং’। তারা যদি এ লেখাগুলো বিস্তারিত লেখে-
— এ ব্যস্ততা কতক্ষণ থাকবে, আমরা বলতে পারছি না; যতক্ষণ তিনি কথা চালিয়ে যাবেন, ততক্ষণ ব্যস্ত থাকবে। আর তিনি যেহেতু নিজের টাকায় কথা বলছেন, আমরা তো না করতে পারি না।
— ওয়েটিং লেখা উঠেছে, ওয়েট করতে থাকুন। ওয়েটটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও করতে পারেন, আরামকেদারায় বসেও করতে পারেন।
— রেলস্টেশনে ওয়েটিং রুম থাকে। কিন্তু কল ওয়েটিংয়ের জন্য আপনাকে আমরা কোনো ওয়েটিং রুম দিতে পারছি না বলে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আজকাল কোনো সমস্যাই যেন সমস্যা নয়। কৃষি সমস্যা বলেন আর রোগবালাইসংক্রান্ত সমস্যা বলেন, নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করামাত্রই সব সমাধান মিলে যায়। নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করে আরও সেবা পাওয়া যেতে পারে এসব বিষয়ে-
— টয়লেটের ছিটকিনি নষ্ট? এটা কোনো সমস্যাই নয়। ছিটকিনির জায়গায় একটা কাঠি অথবা কালিবিহীন কলম ঢুকিয়ে দিন। কাজ চলে যাবে।
— খুব মশা কামড়াচ্ছে? নো টেনশন। পাশের মুদি দোকানির সঙ্গে কথা বলুন। তিনি গোল, প্যাঁচানো একটা জিনিস দেবেন। দেশলাই দিয়ে জ্বালান।
— ভাত কাদা কাদা হয়ে যাচ্ছে? কোনোভাবেই ঝরঝরে হচ্ছে না? মেন্যু পাল্টান। খিচুড়ি রান্না করুন। এ ধরনের আতঙ্ক পোহাতে হবে না।
— শার্টের বোতাম খুলে গেছে? এর জন্য আবার ফোন করতে হয়? বাড়িতে সুঁই নেই?
ইকবাল খন্দকার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০০৯
Leave a Reply