সংবাদ পাঠক-পাঠিকারা সংবাদ শেষ করার সময় পরবর্তী সংবাদ দেখার আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু কথা হচ্ছে, পরবর্তী সংবাদ যে আমরা দেখব, তার কী নিশ্চয়তা? অথচ কত আয়োজন করেই না তাঁরা পরিবেশন করেন সংবাদটা। আমরা না দেখলে সব মাটি। আমাদের আকৃষ্ট করার জন্য তাই তারা পরবর্তী সংবাদের জন্য বলে যেতে পারেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা। ভেবেছেন ইকবাল খন্দকার।
পরবর্তী সংবাদ যিনি পড়বেন, তাঁর ব্যাপারে বলতে পারেন-
— তিনি যে শাড়িটা পরে সংবাদ পড়তে আসবেন, সেটা সরাসরি আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটি পরে এর আগে তিনি আর কোথাও যাননি। শাড়িটি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে চাইলে আমাদের পরবর্তী সংবাদ দেখুন।
— আমাদের এই সংবাদ পাঠিকার হাসি এমনই মারাত্মক যে অনেকেই বলে থাকেন, ঐশ্বরিয়া নাকি লবিং করে বিশ্বসুন্দরী হয়েছেন। নইলে তাঁরই হওয়ার কথা ছিল। লোকজনের এই কথাটা সত্য কি না, এটা প্রমাণ করার জন্য পরবর্তী সংবাদটা দেখুন।
— তিনি অতিমাত্রায় মিশুক। না না, মিশুক বলতে ওই টেম্পোর কথা বলছি না। বলছি, তিনি খবরের ৩০ সেকেন্ড পরপরই ‘প্রিয় দর্শক’ বলে সম্বোধন করবেন। অর্থাৎ আপনার প্রিয় হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
যিনি রিপোর্ট করবেন, তাঁর ব্যাপারে-
— সংবাদ পাঠকেরা যেখানে উচ্চারণের কোর্স করে থাকেন, আমাদের রিপোর্টারও ঠিক সেখানেই কোর্স করেছিলেন। সার্টিফিকেট আছে। এবার বুঝুন তাঁর রিপোর্টটা কেমন হবে।
— আমাদের রিপোর্টার বাংলা রিপোর্টের ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজিতে দু-চারটা বাক্য বলে ফেলারও যোগ্যতা রাখেন এবং সেগুলো শুদ্ধ।
— ‘আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শুনে ফেলেন। তাঁর কানে ময়লা নেই।
— এ ছাড়া স্ক্রিনে আমাদের রিপোর্টারের চেহারা মোটামুটি ভালোই আছে। গালের ব্রণের দাগগুলো একদম দেখা যায় না।
খবরের ফাঁকে ফাঁকে যেসব বিজ্ঞাপন যাবে, সেগুলোর ব্যাপারে-
— কোনো কোনো খবর দেখে আপনি মানসিকভাবে পেরেশান হয়ে ঘেমে যেতে পারেন। তখনই আমরা প্রচার করব টিস্যু অথবা রুমালের বিজ্ঞাপন।
— কোনো কোনো খবর দেখে আপনি আতঙ্কে ঠান্ডা হয়ে যেতে পারেন। আপনার এই অবস্থার কথা মাথায় রেখে আমরা প্রচার করব কম্বলের বিজ্ঞাপন।
— কিছু কিছু খবর আপনার মনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, যে কারণে ছুটে যেতে পারে রাতের ঘুম। নো টেনশন। আমরা প্রচার করব আরামদায়ক ফোমের বিজ্ঞাপন। ঘুম আসবেই।
— কোনো কোনো খবর শুনে রাগে-ক্ষোভে আপনার মরে যেতে ইচ্ছে হতে পারে। তখন আমরা দেব ইঁদুরের বিষের বিজ্ঞাপন। রাগ মেটাতে হয়তো খাবেন, তবে মরবেন না।
খবরের সত্যতার ব্যাপারে-
— আমরা সরকারের চামচামি করে সংবাদ পরিবেশন করি না, বরং সরকারকে খোঁচা দিই। কারণ বেশ কয়েকবার আমাদের চ্যানেলের মালিক তাঁর এলাকা থেকে নমিনেশন চেয়ে পাননি।
— আমাদের খবর সবার আগে। এমনকি কোনো কোনো খবর ঘটনা ঘটার আগেই আমরা অনুমানের ওপর করে ফেলি। এ জন্য জ্যোতিষীর সহায়তা নিই।
— আমাদের খবর কেউ মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে করবেন। এতে সমস্যা হয় হবে; চাকরি চলে যায় যাবে। আমরা ভয় পাই নাকি? অন্য জায়গায় বেশি বেতনে চাকরি রেডি আছে।
খবরের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে-
— আমাদের সংবাদ পাঠক-পাঠিকারা অন্যদের তুলনায় উচ্চ আওয়াজে খবর পাঠ করেন, যে কারণে কষ্ট করে আপনাকে টিভির ভলিউম বাড়াতে হবে না।
— আমাদের খবরের আগে-পরে এমনকি বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে জবরদস্ত মিউজিক বাজানো হয়। এমন মিউজিক আপনি মাইকেল জ্যাকসনের সিডিতেও পাবেন না।
— শুরুতে একবার শিরোনাম, যাওয়ার আগে একবার শিরোনাম, প্রতি বিজ্ঞাপন বিরতিতে একবার করে শিরোনাম বলা হয়। এত্ত শিরোনাম সুবিধা আর কেউ দেবে না।
— আমাদের খবরের নিচ দিয়ে ব্রেকিং নিউজ ভাসতেই থাকে, ভাসতেই থাকে। আর হ্যাঁ, এগুলোয় কোনো বানান ভুল থাকে না। অতএব বাচ্চাদের এগুলো দেখিয়ে বানান শেখাতে পারবেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ২২, ২০০৯
Leave a Reply