ইয়াহু! দীর্ঘ দুই বছরের গবেষণা শেষে আজ আমি টাইম মেশিন আবিষ্কার করে ফেলেছি। আনন্দে মেশিনটার চারপাশ ঘিরে কতক্ষণ নাচানাচি করে ছুট লাগালাম বসুন্ধরা সিটিতে। দুটি এন৯৬ মোবাইল ফোনসেট কিনে বাসায় নিয়ে এলাম। ১৬জিবি মেমোরি পুরোটা গান ও সিনেমা দিয়ে ভরে ফেললাম। আগেই জোগাড় করে রাখা মেশিনগান আর মোবাইল দুটো নিয়ে চড়ে বসলাম টাইম মেশিনে। গন্তব্য প্রাচীন মিসরের রানি ক্লিওপেট্রার কাছে! টাইম মেশিন থেকে নেমে রানির প্রাসাদের দিকে যেতেই আমাকে একদল সেনা আটকাল। কী চাই? জিজ্ঞেস করতেই বললাম, আমি রানির সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাই। এই রোগাপটকা শরীর নিয়ে যুদ্ধ করবে! বলে সবাই হাসাহাসি শুরু করল। অবশেষে সেনাপতি রাজি হলেন এক শর্তে, আমাকে সবার সামনে থাকতে হবে। আমিও তা-ই চাই! দুদিন পরই পার্শ্ববর্তী এক রাজা যুদ্ধ ঘোষণা করলেন রানির বিরুদ্ধে। সবার সামনে আমি মেশিনগানটা নিয়ে এগোতে লাগলাম। তরবারির বদলে এই কিম্ভূত অস্ত্র নেওয়ায় সবাই খুব হাসাহাসি করতে লাগল। বিপক্ষ দলের সেনাপতি সামনে আসামাত্র তাঁর কপাল লক্ষ্য করে মেশিনগানের ট্রিগার ঠেলে দিলাম। ছিটকে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেন সেনাপতি। বিপক্ষ দলের সেনারা তো ভয়ংকর অবাক। যুদ্ধ বাধার আগেই মারা গেলেন সেনাপতি, এর ওপর গুলির প্রচণ্ড আওয়াজ। গড়িমসি করে ছুটে পালাতে লাগল তারা। আমার বীরত্ব শুনে রানি অবাক। আমার সম্মানে আয়োজন করলেন ডিনার পার্টি। প্রাসাদে পৌঁছে আমি রানিকে একটি মোবাইল ফোনসেট উপহার দিলাম। এটা কী? জিজ্ঞেস করায় রানিকে আমি কীভাবে গান বাজাতে হয় দেখিয়ে দিলাম। এত কিছু দেখে রানি ভয়ানক তাজ্জব বনে গেলেন। রানির গান দেখার ফাঁকে প্রাসাদে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ফেললাম আমি। রানিকে ফোন রিসিভ করা শিখিয়ে প্রাসাদের বাইরে এসে আমি তাঁর সঙ্গে কতক্ষণ কথা বললাম। আমি প্রাসাদে প্রবেশ করতেই সিংহাসন ছেড়ে রানি দৌড়ে আমার কাছে এলেন। আমার গলায় ঝুলে বললেন, ‘জাদুকর! ওহ আমার জাদুকর! তুমি আমায় কী জাদু দেখালে? কী চাও তুমি আমার কাছে, বলো।’ আমি বললাম, ‘তোমাকে চাই!’
রানি বললেন, ‘শুধু আমি কেন, তুমি যদি পুরো মিসরটা চাইতে, তাও দিয়ে দিতাম।’ পরদিন ধুমধাম করে রানির সঙ্গে আমার বিয়ে হলো। মাস দুয়েক রানির সঙ্গে কাটিয়ে একদিন টাইম মেশিনে চড়ে আমি বর্তমান সময়ে চলে এলাম। ইতিহাসবিদ ব্যাটারা বুঝবে মজা! কোথায় সিজার? কোথায় অ্যান্টনি? ক্লিওপেট্রার স্বামীর জায়গায় আমার নাম বসাতে গিয়ে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ জুড়ে তাদের করতে হবে কাটাকুটি। মরুক ব্যাটারা। এই ফাঁকে আমি দৌড় লাগালাম ব্যাংকে। লাখ পাঁচেক টাকা নিয়ে চড়ে বসলাম টাইম মেশিনে। গন্তব্য শায়েস্তা খাঁর আমল। মাত্র ৫০ টাকা একরে ঢাকা নামক স্থানের অধিকাংশ জায়গা কিনে ফেললাম আমি। দলিল-দস্তাবেজ ও কাগজপত্র সব নিয়ে টাইম মেশিনে চড়ে আমি আবার বর্তমান সময়ে চলে এলাম। আগামীকাল হাইকোর্টে যাব। ঢাকা শহরের অধিকাংশ জায়গা যে আমার, এই মর্মে মামলা ঠুকতে হবে। তবে সব জায়গা একসঙ্গে নয়, প্রথমেই মামলা দেব কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন যেখানে অবস্থিত, সেই জায়গার জন্য। প্রথমেই ওই জায়গা কেন? কারণ আছে ভাই। ওই ভবনে একটা পত্রিকা অফিস আছে। নাম প্রথম আলো। তার একটা বাচ্চা আছে, নাম রস+আলো। রস+আলোর বি·স· ব্যাটা ভয়ানক পাজি। এত লেখা পাঠালাম, একবারও ছাপাল না। এবার বাছাধন! সব যখন শুনবে লেখা না ছাপিয়ে যাবে কোথায়! লেখা তো ছাপাবেই, উল্টো এসি রুমে বসিয়ে ঠান্ডা খাওয়াতে খাওয়াতে বলবে, ‘বাবাগো, আমাদের উচ্ছেদ কইরেন না। এই গরমে উচ্ছেদ করলে কোথায় দাঁড়াব।’
— রাজীব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply