‘যখন সুইচ টিপে ধরবেন, তখন ওই মানুষটি ইলেকট্রিক শক খাবে।’
তখন মহিলা বললেন, ‘কিন্তু কেন আপনারা তাকে শক দেওয়াচ্ছেন।’ অধ্যাপক বললেন, ‘এটা একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, আমরা দেখতে চাচ্ছি মানুষ সর্বোচ্চ কত ভোল্ট কতক্ষণ সহ্য করতে পারে। এ জন্য তাকে অর্থও দেওয়া হবে।’
তখন মহিলা ওই লোকটিকে শক দিতে শুরু করলেন। সবাই বাইরে চলে গিয়ে মনিটরে সব দেখছে। মহিলা ক্রমাগত ভোল্টেজ বেশি করে শক দিয়েই চলেছেন। আর লোকটা অমানুষিক কষ্ট পাচ্ছে।
মনিটরে মহিলার কঠিন মুখ দেখে অধ্যাপক সহকর্মীকে বললেন, ‘কেমন দেখছ?’ তখন সহকর্মী বলল, ‘অবিশ্বাস্য, একজন মানুষ যে অকারণে আর একজনকে এত কষ্ট দিতে পারে তা আজ প্রথম দেখলাম। আমার রীতিমতো শরীর খারাপ লাগছে।’ অধ্যাপক বললেন, ‘কেন তোমার শরীর খারাপ লাগবে। তুমি তো জানোই এখানে কোনো ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে না। পুরোটাই ওই চেয়ারে বসা লোকটির অভিনয়।’ তখন সহকর্মী বলল, ‘জানি, কিন্তু মানুষটির অভিনয় দেখে মনে হচ্ছে সে সত্যিই শক খাচ্ছে।’ তখন অধ্যাপক বললেন, ‘আমরা তো আসলে মহিলাটিকে নিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করছি। কিন্তু তিনি তা বুঝতে পারছেন না।’ তখন সহকর্মী বলল, ‘কী লাভ এই এক্সপেরিমেন্ট করে? আমরা তো এমনিই জানি মানুষ কতটা নিষ্ঠুর।’ তখন অধ্যাপক বললেন, ‘টাকা দিয়েছে আমাদের এ কাজ করার জন্য, তাই।’ তখন সহকর্মী বলল, ‘যে পরিমাণ টাকা দিয়েছে সে পরিমাণ খরচ নেই।’ অধ্যাপক বললেন, ‘বোধ হয় কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানুষটা গাধা টাইপের।’ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঠিক সেই মুহূর্তে অধ্যাপকের ঘরে গোপনে বসিয়ে রাখা ক্যামেরায় অধ্যাপককে লক্ষ করছিলেন। পাশে বসে থাকা সেক্রেটারির উদ্দেশে বললেন, ‘আমরা এ রকম একটা ফালতু এক্সপেরিমেন্টের জন্য এত টাকা ঢালছি, তাদের কাছে এটা বোকামি মনে হতেই পারে। কিন্তু ওরা তো আর জানে না আমরা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য এসব করি।’
সেক্রেটারি বলল, ‘না জানারই কথা, শুধু ওই নতুন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সে নাকি ত্যাঁদড় টাইপের।’
গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান সহকর্মীকে বললেন, ‘পুরোটা রেকর্ড করেছ?’
সহকর্মীঃ হ্যাঁ।
প্রধানঃ আজকালের ইলেকট্রনিকস সারভেলেন্সের খবর তো রাখে না, তাই এসব উল্টোপাল্টা কথা বলে। আসলে আমরা তো সব কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ওপর চোখ রাখছি। কাল ব্যাটারে ডেকে এনে পুরো ভিডিওটা দেখিয়ে বলব, এখন কে ত্যাঁদড়, বাবা?
সহকর্মীঃ তাহলে তো স্যার সবকিছু জানাজানি হয়ে যাবে। সবাই বুঝে যাবে যে আমরা সবাইকে চোখে চোখে রাখছি।
প্রধানঃ জানুক, টাকা কামানোর এই তো সুযোগ। ওই ব্যাটার কাছ থেকে অনেক টাকা আদায় করব।
সহকর্মীঃ কিন্তু প্রেসিডেন্ট আমাদের এটা গোপন রাখতে বলেছেন।
প্রধানঃ বলুক। কোত্থেকে শালা বুড়ো হাবড়াটা প্রেসিডেন্ট হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট দেয়ালে লাগানো মনিটরে দেখে বললেন, ‘শালার ব্যাটার কত বড় সাহস, আমাকে বলে কিনা বুড়ো হাবড়া!
ওকে আচ্ছা করে শাস্তি দিতে হবে।’
তখন প্রেসিডেন্টের মাথায় একটা মহাজাগতিক প্রাণী উঁকি দিয়ে দেখছে। আসলে প্রেসিডেন্ট কী শাস্তি দেবেন।
দুই বছর থেকে মহাজাগতিক প্রাণীরা মানুষের মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
— সংগ্রহেঃ আসিফ তাজওয়ার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply