‘নেগেটিভ’, সি-৪২০র যান্ত্রিক কণ্ঠ শুনে এভিয়ান ৮৯ শিপের যাত্রীদের হাহাকার অবস্থা। দশম মাত্রার কসমিক বেগের সঙ্গে যুদ্ধ করে সবার হালুয়া টাইট। হতচ্ছাড়া সাপার কম্পিউটারের জন্যই আজ তাদের এ অবস্থা। ২৯৯৫ সাল। প্রথম যাত্রা শুরু করল এভিয়ান শিপ আর্থার ২ প্ল্যানেটের উদ্দেশে। প্রথমবার হাইপার ড্রাইভ দেওয়ার সময় যাত্রীদের অবস্থা লে হালুয়া। তাই দ্বিতীয়বারের সময় সবাই ক্যাপসুলে ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। ব্যস্, এক ড্রাইভে ৮২০ কোয়াড্রিলিয়ান মাইল পার। তখন ৩০০০ সাল, যাত্রীরা লম্বা জার্নি করল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। অবশেষে তারা জেগে উঠল। সকালে উঠে যা হয় আর কি, প্রত্যেকের ব্যাপক ইয়ে চাপল। এটা তো যেমন-তেমন ইয়ে নয়, পাঁচ বছর ধরে পুষে রাখা সুপ্ত ইয়ে। কিন্তু যখনই তারা কসমিক ডাকে সাড়া দেবে, তখনই সি-৪২০ চরম বাস্তব সত্য কথাটা প্রকাশ করল, ‘দুঃখিত মহামান্য যাত্রীগণ, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে টয়লেট ক্যাপসুলগুলো ড্রাইভের সময় বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে, যা আনুমানিক ৮২০ কোয়াড্রিলিয়ন মাইল দূরে ভাসমান আছে, এক মহাশূন্যের গহিনে হারিয়ে গেছে, মূলত গ্যালাকটিক গাইডের ৪২০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ওগুলোর কোনো লজিক্যাল প্রয়োজন পাওয়া যায়নি।’ বলছে কী কম্পিউটার! ‘ইয়ে’ আবার কোনো লজিক মানে নাকি। যাও, দ্রুত কোনো গ্রহ খুঁজে ল্যান্ড করো, জলদি। ক্যাপ্টেন নির্দেশ দিল। হঠাৎ চিৎকার দিল আলটামন্ট, ‘ক্যাপ্টেন লি, দেখুন সামনে ক্লাস্টার বোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়েছে যে পিএক্স-১০ প্লানেট গ্যালাকটিক মানের টয়লেটের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে, বড়টা পাঁচ কেনিজি আর ছোটটা দুই কেনিজি মাত্র।’ ওফ, গ্যালাকটিক টয়লেটের ভাড়া এত বেশি। ঠিক আছে, কম্পিউটার দ্রুত হাইপার ড্রাইভ দাও পিএক্স-১০-এর দিকে। কিছুটা উত্তেজিত ক্যাপ্টেন। ‘আর হ্যাঁ, ড্রাইভটা একটু আস্তে দিয়ো, প্রথমবার যে ড্রাইভটা দিলে না! ওফ, আমার ইয়ে তো দ্বাদশ মাত্রায় উঠে গিয়েছিল।’ সবাই ক্যাপ্টেনের কথায় একমত। বাপরে, প্রথম ড্রাইভের কথা মনে এলে আর২ডি২ রোবটেরই ইয়ে এসে পড়ে। হঠাৎ সি-৪২০ বলে, ‘কিন্তু মহামান্য ক্যাপ্টেন লি, পিএক্স-১০ প্লানেট তো আনুমানিক ফোর টু নাইন হেক্সাকোয়াড্রিলিয়ন মাইল দূরে।’ কী! ৪৯ হেক্সাকোয়াড্রিলিয়ন মাইল! উত্তেজনার চোটে ক্যাপ্টেন ভুল শোনে। ‘না ক্যাপ্টেন, ৪২৯ হেক্সাকোয়াড্রিলিয়ন মাইল।’ ভুল শুধরে দেয় সি-৪২০। এত দূরে গ্রহটা, চৌদ্দপুরুষ পার হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। কথা শুনে লিয়ান্ডার তো পেট খারাপ হওয়ার দশা। ইতিমধ্যে সে সপ্তম মাত্রার মর্মান্তিক সুবাসযুক্ত গ্যাসীয় বিকিরণ করায় সবাই কিঞ্চিৎ অক্সিজেনের অভাব বোধ করছে। ‘কম্পিউটার, এখন সমাধান কী?’ ক্যাপ্টেন চিৎকার করে বলল, “দুঃখিত মহামান্য, আমার নিকট এ রকম পরিস্থিতির কোনো ডেটা এন্ট্রি হয়নি, সুতরাং আমরা ‘০’ মাত্রা বিবেচনায় অসংজ্ঞায়িত বলতে পারি।” সি৪২০-এর কথা শুনে সবার সংজ্ঞা যায় যায় অবস্থা। যাই হোক, সবাই বুঝতে পারছে, কী ভয়ানক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে, কিন্তু হায়! হতচ্ছাড়া কম্পিউটারটা তা বুঝছে না।
— মো· মাসুদুল ইসলাম ইব্রাহীম
সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply