বিজ্ঞান কমিটির প্রধান নির্বাহী নারা। যেকোনো বৈঠকে সাধারণত তিনিই সবার আগে কথা বলেন। কিন্তু সেদিন ব্যতিক্রম হলো। সবার আগে কথা বলে বসলেন মাঝারি মানের জীববিজ্ঞানী দিশু। ‘মহামান্য নারা, মাফ করবেন। আমি একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার করে ফেলেছি।’
নারাসহ আরও অনেক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট বিরক্তভরা দৃষ্টিতে দিশুকে দেখলেন। সে আবার বলল, ‘মহামান্য নারা, আমি আর উত্তেজনা সহ্য করতে পারছি না। আমাকে বলতে দিন। দয়া করে অনুমতি দিন।’ নারা গম্ভীরভাবে বললেন, ‘অনুমতি দেওয়া হলো।’ দিশু বলতে শুরু করলেন, ‘মহামান্য বিজ্ঞানীরা এখানে উপস্থিত আছেন, আমি সবাইকে আজ এমন একটা তথ্য জানাব, যাতে সবাই চমকে উঠবেন। আজ ৫০০৯ সালের ২ জানুয়ারি। আমাদের এই সভ্যতার জন্ম হয়েছিল কয়েক হাজার বছর আগে। আমরা সবাই তা জানি। মানবজাতির বিবর্তন সম্পর্কেও আমরা অবহিত। মানুষের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও আমরা জানি। মানুষ সাধারণত খাদ্য হিসেবে জৈব পদার্থ গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে কালের বিবর্তনে এক বিশেষ শ্রেণীর মানব হারিয়ে গেছে, যারা ধাতুখণ্ডকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত।’ সবার মধ্যে এক ধরনের চাঞ্চল্য দেখা দিল। গুঞ্জন উঠল, ‘অসম্ভব, অসম্ভব।’
দিশু আবার শুরু করলেন, “অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলেছিল আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগের কিছু মানুষ। এরা বাস করত হিমালয় পর্বতের দক্ষিণে ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে একটি সমতল এলাকায়। এরা ‘টিন’ নামের এক ধরনের ধাতব পাত ভক্ষণ করত। তৎকালীন একটি দৈনিক পত্রিকায় এদের ‘টিনখোর’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, এরাই তখন নেতৃত্ব দিত ওই সমতল এলাকার মানুষদের। স্থানীয় ভাষায় এদের ‘এমপি’ ও ‘চেয়ারম্যান’ প্রভৃতি বলে ডাকা হতো।”
পুরো বিজ্ঞান কমিটি স্তব্ধ। সেদিনের বৈঠক বাতিল করা হলো। সবাই এখন এই অদ্ভুত প্রজাতির মানুষের বৃত্তান্ত নিয়ে গবেষণা করছে। কিন্তু তারা কি আদৌ কোনো ফল পাবে?
টিনগুলো যে টিনখোরদের জোটে যায়নি, গিয়েছিল গুদামঘর আর পুকুরের পানিতে। রেকর্ড তো তিন হাজার বছর আগেই মুছে ফেলা আছে।
— এস এ নির্ঝর
মুনশীবাড়ী, আলাইপুর, নাটোর।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply