সাল-২০৮৭। মানবজাতির সামনে গভীর সংকট। খুব বেশি দিন হয়নি সারা দুনিয়া ডিজিটাল হয়েছে। কিন্তু মানবজাতির যে সংকট তা ডিজিটালে সমাধান সম্ভব নয়। বাঘা বাঘা ক্ষমতার কম্পিউটার ফেল মেরেছে। কিছু করতে হলে মানুষকেই করতে হবে। মানুষ এর আগে অনেক বড় সমস্যা পার হয়ে এসেছে। এর মধ্যে সব থেকে বড় দুটি নি্নরূপঃ
সমস্যার নাম মাত্রা
১। হিটলারি সমস্যা ৩২·৯৯ (টেনেটুনে পাস)
২। বুশ (বাবা ও ছেলে) প্রবলেম এটার মাত্রা এখন পর্যন্ত হিসাব করা যায়নি।
কিন্তু বর্তমান সমস্যার যেন কোনো মা-বাপ নেই। মনে হচ্ছে বুশ-প্রবলেমও এটার কাছে কিছুই না। নাকি এটাও বুশ-প্রবলেমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
ঘটনা পরিষ্কার করা যাক। কিছুদিন আগে সুদূর মিন্জ গ্যালাক্সিতে ম্রয় নামের একটা গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। মানুষ সেটা আবিষ্কার করেছে তা বলা যাবে না। বরং বলা যায় ম্রয়বাসীই পৃথিবীকে খুঁজে বের করেছে। এর পরই শুরু হয়েছে এই জ্বালাতন। ম্রয়ুসরা (ম্রয়বাসীদের বলা হয় ম্রয়ুস) তাদের সৃষ্ট সব প্রাকৃতিক বর্জø পৃথিবীতে এনে ফেলছে। ম্রয়ুসদের বর্জেø এমন দুর্গন্ধ! ম্রয়ুসরা দুর্গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না। সামান্য দুর্গন্ধেই তারা জ্ঞান হারায়। দুর্গন্ধের মাত্রা একটু বেশি হলেই মৃত্যু। তাই বিশেষ ভ্যাকুয়াম ব্যাগে প্রাকৃতিক কাজ সেরে সেগুলো পৃথিবীতে এনে ফেলে ব্যাগগুলো মানুষকে দিয়েই পরিষ্কার করিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আগে এগুলো অন্য নির্জন গ্রহে ফেলত। কিন্তু পৃথিবী খুঁজে পাওয়ার পর এখানে ফেলছে। কোনো যুক্তিই মানছে না। যুদ্ধ করেও তাদের সঙ্গে পারা যাবে না। ম্রয়ুসের সংখ্যা যদিও অনেক কম, কিন্তু প্রযুক্তি ও মারণাস্ত্রে তারা অনেক উন্নত। এ সমস্যা সমাধানে পৃথিবীর সব বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের মাথার ঘাম ডিজিটাল এসির কল্যাণে মাথাতেই শুকাচ্ছে।
দার্শনিকদের কথা যখন এলই, তখন অবশ্যই বলতে হয় মিহুর কথা। বাংলাদেশি তরুণ এই দার্শনিক দুর্দান্ত ফাজিল। স্কুলজীবনে এমন কোনো দিন নেই, যেদিন সে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নয়ছয় করেনি, সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিন শো সিনেমা দেখেনি। কিন্তু তারুণ্যের শুরুতেই পরাবাস্তবতার ২১টি ভয়াবহ ব্যাখ্যা দিয়ে সে সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
ম্রয়সমস্যা সম্পর্কে সব জেনেও মিহু এসব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। সুগন্ধে-দুর্গন্ধে তার কাছে এমন কোনো পার্থক্য নেই। রকি পর্বতমালার এক নির্জন গুহায় ডিজিটাল বাথটাবে শুয়ে সে একটা প্রাচীন গল্প পড়ছিল। হঠাৎই সে ভেজা শরীরে ‘পাইছি, পাইছি’ বলে শুরু করল দৌড়। এক দৌড়ে জাতিসংঘের সদর দপ্তর। তারপর জাতিসংঘের প্রধানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
বাকিটুকু ইতিহাস। ম্রয়ুসপ্রধানকে ভুজুং-ভাজুং দিয়ে পৃথিবী থেকে ৫০০ সদস্যের প্রতিনিধিদল গেল ম্রয়ুসদের জীবনযাত্রা দেখতে। রওনা হওয়ার আগে তারা মিহুর বুদ্ধিমতো ভালোমন্দ খেয়ে নিতে ভুলল না। দৃশ্যমান মারণাস্ত্র নিয়ে যেখানে ম্রয়ে পৌঁছানো অসম্ভব, সেখানে ৫০০ মানুষের পেটে ভরে দেওয়া হলো অদৃশ্য বায়বীয় মারণাস্ত্র। ম্রয়ে পৌঁছানোর পর যখন সব ম্রয়ুস একত্রে এই প্রতিনিধিদলকে দেখতে এল, তখনই এরা ঘটাল ভয়াবহ নিঃসরণ। ব্যস, এতেই কর্ম সাবাড়। এই নিঃসরণ এমনই দুর্গন্ধ সৃষ্টি করল যে তাতে সব ম্রয়ুস তো বটেই, প্রতিনিধিদলের ১৩২ সদস্য পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেল।
এ ঘটনা ্নরণে বিখ্যাত কবি শুলু লিখল তার বিখ্যাত কবিতা ‘কার্যসিদ্ধি’। কবিতাটা এমন-
মিহু দিল বুদ্ধি
তাতেই কার্যসিদ্ধি
ঘোড়ার পেটে দখল ট্রয়
মানুষের পেটে হারল ম্রয়।
বলা বাহুল্য, মিহু গুহায় বসে ট্রয়ের কাহিনীটাই পড়ছিল। এবং ইতিহাসের শিক্ষাই মানবজাতিকে আরেকবার রক্ষা করল।
— সবুজ ওয়াহিদ
অভয়নগর, যশোর।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply