সায়েন্স ফিকশন লেখক আইজ্যাক আজিমভ এবং আরেক সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্কের মধ্যে চাপা রেষারেষি ছিল। তবে এ রেষারেষি ছিল মধুর রেষারেষি। সায়েন্স ফিকশন লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে সফল, বিশেষ করে অর্থকড়িতে ছিলেন আর্থার সি ক্লার্ক। আজিমভ ও ক্লার্কের ভেতর রেষারেষি খেলাটা হতো চিঠিপত্রের মাধ্যমে। কারণ, আর্থার সি ক্লার্ক বাস করতেন শ্রীলঙ্কায় আর আজিমভ বাস করতেন ম্যানহাটানে। আজ দুজনের কেউই ইহজগতে নেই। আছে কিছু হাস্যরসাত্মক ্নৃতি। আজিমভ তাঁর এক বইয়ে এসব হাস্যরসাত্মক ্নৃতিকথা লিখে গিয়েছিলেন। নিচে দেওয়া হলো তাঁর ্নৃতিকথার দু-তিনটিঃ
১·
বছর দুয়েক আগে আইওয়াতে একটি প্লেন ক্রাশ করে। সৌভাগ্যক্রমে প্লেনের যাত্রীদের অর্ধেক বেঁচে যায়। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে একজন খবরের কাগজের প্রতিবেদককে বলেন যে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা থেকে মনকে দূরে রাখার জন্য মনোযোগ দিয়ে তিনি আর্থার সি ক্লার্কের একটি উপন্যাস পড়ছিলেন।
এই কাহিনী খবরের কাগজে ছাপা হয় এবং অবশ্যই আর্থার সেই খবরের অংশটুকু কেটে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয় (আমি ওর কাছে দাবি করলাম এই খবরের অংশটুকু সে সবার কাছে পাঠিয়েছে, কিন্তু আর্থার জানাল যে সে শুধু আমার কাছেই পাঠিয়েছে)। খবরের অংশটুকুর শেষে আর্থার নিজ হাতে লিখে দিয়েছিলেনঃ ‘যদি ওই যাত্রী তোমার কোনো বই পড়ত তাহলে সে দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকত।’
জবাবে আমি একটা উত্তর পাঠালামঃ ‘উল্টো বললে এমন হয়, লোকটা তোমার বই পড়তে পড়তে ভেবেছিল, এই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচার জন্য দুর্ঘটনার মৃত্যু অনেক ভালো। তাই সে বিচলিত ছিল না।’
২·
একবার আর্থার আমাকে চিঠি লিখে আনন্দের কথা জানাল যে আমার সব উপন্যাসের পেপারব্যাক সংস্করণ এশিয়ায় প্রায় দেশের বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। সে আরও লিখেছেঃ ‘আমার নিজের বই পাওয়া যায় না। দোকানে শেলফে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যায়।’
জবাবে আমি লিখলাম, ‘এর মানে হলো দোকানমালিক তোমার বই পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শেলফ থেকে দ্রুত গোডাউনে সরিয়ে ফেলে বলেই তোমার বই শেলফে দেখা যায় না।’
৩·
একবার এক সায়েন্স ফিকশন সম্মেলনে একজন মহিলা ভক্ত আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, ‘ড· আজিমভ, আমি আপনার লেখা চাইল্ডহুড এন্ড উপন্যাসটি মাত্র পড়া শেষ করেছি। উপন্যাসটি আমার ভালো লেগেছে, এর পরও আমি বলব না যে আপনার অন্য উপন্যাসগুলোর মতো ভালো।’
ব্যাপারটা বুঝতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। মূল সমস্যাটা হলো, আর্থার ও আমার লেখার ধরন প্রায় একই, তাই যেকোনো পাঠকের কাছে তার বই আমার বই মনে হতে পারে, আবার আমার বই তার বই মনে হতে পারে। চাইল্ডহুড এন্ড আর্থারের লেখা প্রথমদিককার সবচেয়ে সফল উপন্যাসগুলোর একটি।
তাই আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মজা করার জন্য বললাম, ‘জি, ম্যাম। আমি নিজেই উপন্যাসটির ব্যাপারে চরম হতাশ। আমার কাছে মনে হয়েছে বাজে উপন্যাস। সে কারণেই বইটি আর্থার সি ক্লার্ক জুনিয়র ছদ্মনামে লিখেছি।’
হাসান খুরশীদ রুমী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply