হোয়াইট হাউস। ৩০ সেকেন্ডের জন্য পাওয়ার কাট। তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। ডাক পড়ল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। কেউ কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। গম্ভীর মুখে বসে আছেন প্রেসিডেন্ট। সামনে মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান। টেবিলে স্যান্ডউইচ আর কফি। কেউ কোনো কথা বলছে না। এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাটাসাট স্যান্ডউইচ মুখে পুরে যাচ্ছেন। আর ওদিকে, বিদ্যুৎমন্ত্রী কফিতে ঘন ঘন চুমুক দিচ্ছেন। ফুরুত ফুরুত শব্দ হচ্ছে।
আচমকা প্রেসিডেন্ট হুঙ্কার ছাড়লেন, ‘খাওয়া বন্ধ করেন!’
সক্কলে চমকে উঠল। প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে এ রকম ঘটনা আগে ঘটেনি। আর আপনারা বসে বসে চপড় চপড় করে খাচ্ছেন?’ প্রেসিডেন্ট ঝাড়া পাঁচ সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন, ‘যান, চার ঘণ্টা সময় দিলাম, এর মধ্যে কারণ খুঁজে আমার সামনে পেশ করুন। নইলে···’ কথা শেষ হতে না হতেই সব্বাই হুড়মুড় করে বেরিয়ে গেল। কেউ বেরিয়েই মোবাইল ফোন টিপতে শুরু করল। কেউ মিটিং রুমের বাইরেই ল্যাপটপ নিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। শুধু প্রেসিডেন্ট মিটিং রুমে একা বসে রইলেন। দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেগে গেল।
প্রেসিডেন্টের সামনে পর্দায় গ্লোবাল পজিশন প্রোজেক্ট হচ্ছে। তিনি ভাবছেন, কোন দেশ এই চক্রান্তের পেছনে থাকতে পারে। এমন সময় তিনি লক্ষ করলেন স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি পাঠানো গ্লোবাল পজিশনের ইমেজটা কেমন বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে। এরপর ঝিরঝির। এরপর আবার পরিষ্কার, তবে এটা স্যাটেলাইট ইমেজ নয়। পরিষ্কার হোয়াইট হাউসের পেছনের বাগানের ছবি। নড়েচড়ে বসলেন প্রেসিডেন্ট।
স্ক্রিনে এলিয়েন!! প্রেসিডেন্ট ভাবলেন, এটা কি হলিউডের কোনো মুভি! ভুল ভাঙল স্ক্রিনের পাশে হোম থিয়েটার সিস্টেম থেকে অডিও আসার সঙ্গে সঙ্গে। স্ক্রিনের এলিয়েন কথা বলে উঠল, ‘সুপ্রভাত, প্রেসিডেন্ট। আপনার ৩০ সেকেন্ড বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে আমাদের কারণেই। আসলে আমরা এখানে এসেছি একটি মিশন নিয়ে। শুনেছি আপনারা নাসা নামের প্রতিষ্ঠান থেকে একটি ভয়ানক মারণাস্ত্র বানাচ্ছেন, যা গ্যালাক্সি থেকে আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এর আগে আমরা আপনাদের কবজা করতে এসেছি। তবে যেহেতু আপনাদের বিপুল পরিমাণে পানির সোর্স আছে, সেহেতু আপনাদের পুরোপুরি ধ্বংস করা হবে না। শুধু পানি শোষণ করা হবে। পানি শেষ হয়ে গেলে মানবজাতি এমনিতেই নাই হয়ে যাবে।’
প্রেসিডেন্টের মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। কিন্তু মনের ভেতর সিডর হয়ে যাচ্ছে। সারা শরীর দরদর করে ঘামছে, কিন্তু কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। এলিয়েনটা বলেই চলল, ‘আমরা আপনাদের টেকনিকই ফলো করেছি। ইরাক ওয়ার স্ট্র্যাটেজি। তবে আমরা শুধু পানি চাই।’
প্রেসিডেন্টের চোখ ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে, তিনি দেখেন এলিয়েন নয়, চোখের সামনে জলজ্যান্ত আজরাইল। প্রেসিডেন্ট খুব ভয়ে ভয়ে মুখ খুললেন, ‘তোমরা যত খুশি পানি নিয়ে যাও। কিন্তু তোমরা আমার কাছে কেন এলে?’ এলিয়েন বলল, ‘তুমি নাকি বিশ্ব মোড়ল, তোমার কথাতেই পুরো বিশ্ব নাচে, তাই তো তোমার কাছেই এসেছি।’
প্রেসিডেন্ট এবার আরেকটু সাহস সঞ্চয় করে বললেন, ‘ভাই এলিয়েন, আমি তো ইরাক থেকে তেল আনছি, পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে দিচ্ছি সুরক্ষা, তোমরা আমাদের কী দেবে?’
এলিয়েন এবার মুচকি হেসে বলল, ‘কেন, গণতন্ত্র!’
নিযম নির্ঝর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০১, ২০০৯
Leave a Reply