একটি বাংলাদেশি কোম্পানি ও একটি জাপানি কোম্পানি নিজেদের মধ্যে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করল। ঠিক হলো, বুড়িগঙ্গা নদীতেই নৌকাবাইচ হবে। দুই দলই বেশ জমজমাট প্রস্তুতি নিল। অনেক প্রশিক্ষণ ও কঠিন শ্রমের পর এল সেই প্রতীক্ষিত দিন।
বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ চারদিকে। প্রতিযোগিতা শুরু হলো। জাপানি দল প্রায় এক মাইল ব্যবধানে জিতে গেল।
বাংলাদেশ দলটি তখন বেশ আশাহত এবং কোম্পানি এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরাজয়ে খুবই মর্মাহত। একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতের কর্মপন্থা সম্পর্কে দিকনির্দেশনার দায়িত্ব দেওয়া হলো।
এক মাস তদন্তের পর কমিটি তার প্রতিবেদনে বলল, পরাজয়ের কারণ নৌকাবাইচে জাপানি দলের আটজন দাঁড় বাইছিল আর একজন দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল, যেখানে বাংলাদেশ দলে একজন দাঁড় বাইছিল আর আটজন দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল।
বাংলাদেশি করপোরেটের ম্যানেজমেন্ট টিম সঙ্গে সঙ্গে একটি বিদেশি কনসালটেন্সি ফার্মকে এই বিষয়ে গবেষণা করে সঠিক কর্মপন্থা বের করার এবং কর্মদক্ষতা উন্নয়নের দায়িত্ব দিল। বেশ কিছু মাস ও কোটি কোটি টাকা খরচের পর কনসালটেন্সি ফার্ম জানাল, নৌকাবাইচে বেশ কিছুসংখ্যক প্রতিযোগী দিকনির্দেশনা দিচ্ছিল, যেখানে সমন্বয়ের অভাব ছিল এবং পর্যাপ্ত দাঁড় বাওয়া হয়নি। অতএব পরবর্তী বছর যাতে জাপানি কোম্পানির কাছে না হারে, সে জন্য তারা একটি চমৎকার কর্মপন্থাও বের কর ফেলল। আর তা হলো-
নৌকাবাইচে চারজন প্রধান দিকনির্দেশক থাকবে, তিনজন সহযোগী দিকনির্দেশনার কাজ করবে এবং একজন সমন্বয় সাধন করবে। অপরদিকে বাকি একজনকে দাঁড় বাওয়ার ওপর বেশ কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তার দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তবেই জাপানি কোম্পানির সঙ্গে জেতা সম্ভব।
যেমন কথা তেমনি কাজ। পরবর্তী বছর আবার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। এবার বাংলাদেশ দলটি দুই মাইলের ব্যবধানে হারল।
ফলাফল দেখে বাংলাদেশি কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট টিম বেশ কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ নিল। যিনি দাঁড় বাইছিলেন তাঁকে তাঁর অদক্ষতার জন্য বহিষ্কার করল। ওই নৌকাটি নিলামে তুলে বিক্রি করে দিল এবং এ সংক্রান্ত যত অর্থ লগ্নি ছিল তা ফিরিয়ে নেওয়া হলো। কনসালটেন্সি ফার্মকে তার দক্ষ কর্মপরিকল্পনার জন্য পুরস্কৃত করা হলো। যা টাকা থাকল, ম্যানেজমেন্টের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের বোনাস হিসেবে প্রদান করা হলো।
আর এভাবেই করপোরেট নৌকাবাইচের ইতি ঘটল।
মুনাস ইকবাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০০৯
Leave a Reply