ঘুম ভাঙতেই মোতালেব সাহেব ঠিক করলেন, আজ থেকে তিনি বদলে যাবেন। তিনি দেখলেন, তাঁর স্ত্রী স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন। তিনি বললেন, কই যাও?
-কই যাই মানে? তুমি জানো না আমি একটা স্কুলে চাকরি করি? ন্যাকামি কর?
-তোমার স্কুলে যাওয়া হবে না।
-মানে?
-মানে আজ থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ। আমি আরও আধা ঘণ্টা ঘুমাব। এর মধ্যে তুমি আমার নাশতা প্রস্তুত করবে। আমি যখন নাশতা খাব, আমার পাশে বসে থাকবে। তারপর অফিসে যাওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে বিদায় জানাবে। একটা বিদায় চুম্বনও দিতে পার চাইলে।
স্ত্রী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন! এই তার স্বামী? তিনি চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নাশতা তৈরি করতে গেলেন।
মোতালেব সাহেব অফিসে পৌঁছে দেখেন তাঁর রুমে দুজন লোক বসে আছেন আগে থেকে।
-আপনারা?
-স্যার, ওই যে আমাদের ফাইল দুটো।
-ও আচ্ছা। টাকা এনেছেন?
-টাকা?
তাঁরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করেন।
-টাকা ছাড়া ফাইল নড়বে না।
-স্যার, আপনি টাকা চাইলেন? আপনার মতো ঋষিতুল্য মানুষ!
-হুঁ! চাইলাম। কারণ ‘আমি বদলে গেছি’।
বজ্রাহত হয়ে বসে থাকেন দুই লোক। তারপর পকেটে হাত ঢোকান টাকা বের করতে!
অফিস শেষে মোতালেব সাহেব উঠলেন। এ সময় দুই-তিনজন তরুণ অফিসার ঢোকেন তাঁর রুমে।
-স্যার!
-তোমরা?
-কেন, স্যার, যাবেন না?
-কোথায়?
-বাহ! ভুলে গেলেন, স্যার? আমরা অফিস ছুটির পর আপনার সাথে ‘চা বারে’ যাই। সেখানে চা খেতে খেতে আপনি সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। আমরা সেখান থেকে জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পাই!
-ও আচ্ছা! মনে পড়েছে। হ্যাঁ, চলো। তবে চা বারে নয়।
-কোথায়?
-আসল বারে। আমরা একটু পান করব!
হতভম্ব তরুণ অফিসাররা এ ওঁর মুখের দিকে চান। এ কী শুনছেন তাঁরা? ঋষিতুল্য স্যার এ কী বলছেন?
গভীর রাতে পাঁড় মাতাল হয়ে মোতালেব সাহেব তাঁর এলাকায় ঢুকলেন। দুজন নাইট গার্ড ডিউটি করছিলেন। তাঁরা ছুটে এলেন।
-স্যার, আপনার একি অবস্থা? আপনি মাতাল! আপনি মদ খেয়ে টাল হয়ে বাড়ি ফিরছেন?
-হ্যাঁ, মদ খেয়েছি। আমি যে বদলে গেছি!
-কিন্তু কেন, স্যার?
-কারণ···ওরা বদলাতে বলেছে, কিন্তু যারা আগে থেকেই বদলে আছে তারা কী করবে? তাদেরও তো বদলাতে হবে, না কি? তাই···হিক্।
টলতে টলতে এগিয়ে যান মোতালেব সাহেব।
(প্রিয় পাঠক, তবে এ ধরনের বদলানো কিন্তু আমাদের কাম্য নয়! হে হে···!! )
আহসান হাবীব
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০০৯
Leave a Reply