-ফল সেমিস্টারে ভর্তি হয়েছেন? বলেন কী? সেমিস্টারও ফলের হয়? সে কি তবে আম-কাঁঠাল সেমিস্টার?
-আরে না। যা-ই হোক, এখন অবশ্য আম-কাঁঠালের ছুটি চলছে।
ফলের আকাল এ বঙ্গদেশে কোনোকালেই অবশ্য ছিল না। আজকাল আরও কত ফলই না যোগ হয়েছে। সেসব যোগ করলেও তো দাঁড়ায় যোগফল। পরীক্ষা দিয়েছেন? হয়তো ঘোড়ার ডিম পেয়েছেন। সেটাও কিন্তু ফল। ফলাফল আর কি। কেউ অবশ্য এতে সফলও হয়, কেউ বা বিফল। ভূতভবিষ্যৎ জানতে চান? হাত বাড়ান রাশিফলের দিকে। অবশ্য কেউ কেউ বলে ‘মাকাল ফল’। বিশ্বাস করে লাভ হবে না, ভেতরে কিচ্ছুটি নেই।
জানেনই তো ডুমুরের ফুল দেখাই যায় না। এমন একটা ফলও তো থাকা চাই, যা কখনো প্রকাশিত হয় না, দেখা যায় না। এ রকম ফলও আছে এই দেশে, এর নাম ‘তদন্ত ফল’। আছে কর্মফল, সুফল, কুফল।
ফলময় এই বঙ্গে ফল বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা চালানো কোনো বিষয় না। বিষয় হচ্ছে এসবের ফলে তেমন কোনো ফল লাভ হবে কি না।
অবশ্য ‘বিফলে মূল্য ফেরত’ কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। এটি শুনে একজন তো বলেই বসলেন, কী বললেন, বিফলে মূল্য ফেরত? আমারে ১০০ টাকার বিফলই দেন। (বিফলের যে মূল্যটা ফিরিয়ে দেবেন! সুতরাং ফাও পাওয়া যাবে বিফল; ফ্রি পেলে বাঙালি আলকাতরাও নেয়।)
ছোট্ট ছেলেটিকে আদর করে ‘কচি’ বলি, আবার তার পরিণত বুদ্ধি দেখে বলি, ‘খুব দেখি পেকে গেছিস!’ যেন রসাল কোনো ফল, কচি থেকে এইমাত্র পাকল। সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে বলে, কমলার কোয়ার মতো ঠোঁট।
ফল আমাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি করে জড়িয়ে রয়েছে। এই যে দেখুন না, জনতা সব সময়ই হয় আম-‘আমজনতা’। সেই আমজনতার মাথায় নেতারা আবার কাঁঠাল ভেঙে খেতেই বেশি ভালোবাসেন। তা ছাড়া সব ঋতুতেই রাজপথে পাবেন জাম (পড়ুন জ্যাম), সংস্কৃতির সঙ্গে চর্চা করতে হবে কলা, কাউকে এগিয়ে নিতে ঝোলান মুলা, এত কিছুর পরও রক্ষা করতে হবে ‘কুল’। ওই যে বলেন, ‘কুল রাখি না শ্যাম রাখি?’ এত কিছু করেও কথায় রাখতে হয় তাল। গানেও মেলাতে হয় তাল। আজকাল আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার নজির অনেক।
আছে গুরুজনের কথা, ভুলে বারবার বেলতলায় যাওয়ারও নজির। আমাদের নেতাদের অতীত-বর্তমান দেখে অবলীলায় এ কথা বলা যায়। তবু আশা করি, আমাদের নেতারা বদলে যাবেন। সুফল লাভের আশায় এখনই তাই গোঁফে তেল দিয়ে বসে আছি। বাঙালি গাছে কাঁঠাল দেখলে গোঁফে তেল দেবেই···।
মহিউদ্দিন কাউসার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৫, ২০০৯
Leave a Reply