তুমি যত বড়ই হও না কেন, নরসুন্দরের সামনে মাথা নোয়াতেই হয়
-এজাজুল ইসলাম
টেলিভিশনের পর্দায় যাঁর মুখ ভেসে উঠলে ছেলে-বুড়ো সবার ঠোঁটই কানে গিয়ে ঠেকে, পর্দায় হাসানোর পাশাপাশি বাস্তবে যিনি লোকের রোগশোক সারাতেই সিদ্ধহস্ত, তিনি এজাজুল ইসলাম। এসেছেন আলোচনে। সঙ্গে ছিলেন জিনাত রিপা
আপনি ডাক্তার। দয়া করে বলবেন কি, আসলে ব্যবস্থাপত্রে এমন কী লেখা থাকে যে ডাক্তার আর ওষুধ বিক্রেতা ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না?
— ‘আমারটা আমি কামিয়ে নিয়েছি। এবার তোরটা তুই বুঝে নে!’
আপনি দীর্ঘদিন ধরে হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর নাটকে কাজ করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক কোনটি?
— খুব গুরুত্বপূর্ণ সিকোয়েন্সের শুটিংয়ের সময় স্যার সামনে থাকেন না। স্যার যখন পরিচালনা করেন, তখন অল্প একটু ভুল করলেও খুব রেগে যান। এ জন্য সব সময় তটস্থ থাকতে হয় ইউনিটের সবাইকে। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ শটের সময় স্যার নিজেই উঠে চলে যান আমাদের কথা ভেবে। স্যার চলে গেলেই সবাই টেনশন ছাড়া দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলতে পারেন। স্যার থাকলেই বরং টেনশনে বারবার ভুল হয় আর স্যার রেগে যান।
আচ্ছা, অপারেশন থিয়েটারে রোগী বাদে ডাক্তার অন্য কাউকে ঢুকতে দেন না কেন?
— তবে একটা মজার ঘটনা বলি। আমি তখন রংপুরে। একবার এক অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে আমিও পড়লাম। তো সেদিন রংপুরের ডিসি সাহেবের খুব মর্জি হয়েছে তিনি অপারেশন দেখবেন। যতই তাঁকে বোঝানো হচ্ছে, তিনি ততই গোঁ ধরছেন। তাঁর বক্তব্য-তিনি ডিসি মানুষ। জীবনে কত বড় বড় ঘটনা দেখেছেন। ও মা! যেই না অপারেশন শুরু হলো, একটুখানি রক্তপাত দেখেই তিনি অজ্ঞান! বুঝুন, ঠেলা।
আমাদের দেশের কোন ব্যাপারটি আপনার কাজ করার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হয়েছে?
— ভেজাল খাবার। রোগশোক লেগেই আছে। এতে ডাক্তারিতে সুবিধা হয়। আর অভিনয়ে ভালোবাসা। (ভালোবাসা ডাক্তারিতেও প্রযোজ্য)।
‘তারা তিনজন’-আপনার এবং ফারুক আহমেদ ও স্বাধীন খসরুর একটি জনপ্রিয় সিক্যুয়েল নাটক। আপনাদের তিনজনের কোনো মজার ঘটনা আছে একসঙ্গে?
— একবার একটি নাটকের কাজে শীতের মৌসুমে লন্ডন গিয়েছি। সারা রাস্তা, শহর বরফে ঢাকা। আমরা বুদ্ধি করে চিনি নিয়ে বের হলাম। যেখানকার বরফ একটু বেশি পছন্দ হয়, চিনি দিয়ে খেয়ে ফেলি। ঘটনাটা মনে পড়লে এখনো ওভাবে আইসক্রিম বানিয়ে খেতে ইচ্ছে করে।
উন্নত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে কোন দিক দিয়ে?
— আচার বনাম টমেটোর সসে।
আর পিছিয়ে?
— ওখানকার ছোট শিশুরাও পটাপট ইংরেজিতে কথা বলে!
মোবাইল ফোনের সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক কোনটি?
— শ্যামলী থেকেও বলে দেওয়া যায় ফার্মগেট। যার যেমন সুবিধা আরকি!
শুরুটা এক হলেও সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ এমন দুটি শব্দ বলুন।
— তুষ আর তুষার।
দুই নৌকায় পা দিলে কী হয়?
— প্যান্ট ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
ডাক্তারি বিদ্যা আপনার কী কেড়ে নিতে পারেনি?
— সুন্দর হাতের লেখা।
কোনো ব্যাংকে ডাকাতির পর প্রথম কোন কাজটা করা হয়?
— ব্যাংকের সামনে কড়া পুলিশি প্রহরা বসানো হয়।
জীবনের বড় দুঃখ কী?
— জীবনে কখনো অস্কার পাব না।
এমন কোনো পেশা আছে, যেখানে সব মানুষ ওই পেশাজীবীর সামনে মাথা নুইয়ে রাখতে বাধ্য হয়?
— নরসুন্দর।
নরসুন্দরের পেশার সঙ্গে মিল আছে কোন পেশার?
— রাখালি। একজন কাটে ঘাস, আর অন্যজন চুল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৮, ২০০৯
Leave a Reply