কথাশিল্প
কথা বলা নাকি একটা শিল্প। কিন্তু আমাদের শিল্পমন্ত্রী কথা বলেন কম। আসলে ফড়িয়ার দেশে শিল্পটিল্প তো কিছু নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও বন্ধ। বেচারা দিলীপ বড়ুয়া ‘কথাশিল্পী’ হয়ে তো আর সেগুলো সচল করতে পারবেন না। কম কথার জন্য এক কথায় সাধুবাদ।
কথাবাণিজ্য
কথা আবার বাণিজ্যও। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বোধহয় বিষয়টা ধরতে পেরেছেন। তিনি ধুমসে কথা বলছেন। তিনি গত মাসে হঠাৎ বললেন, রমজানে যেন কেউ দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে তার জন্য টিসিবির মাধ্যমে তেল আমদানি করা হবে। তিনি তো বলে খালাস। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বসে থাকার লোক নন। তাঁরা কথার (তথ্য) ফাঁকে বাণিজ্য খোঁজেন। বিশ্ববাজার স্থিতিশীল, দেশেও আমদানি সমস্যা নেই; তবু মন্ত্রীর ঘোষণার কয়েক দিন পরই তাঁরা তেলের দাম হঠাৎ বাড়িয়ে দিলেন। রমজানে যদি সত্যি সত্যি টিসিবি তেলের বাজারে বেল ভাঙে! বেচারা বাণিজ্যমন্ত্রী! তিনি তেলওয়ালাদের নিয়ে বসলেন। ফুটন্ত তেলের মতো টগবগ করে বললেন, দাম কিছুতেই বাড়তে পারে না। তেলওয়ালারা পামঅয়েলের মতো মুখ করে টিভি ক্যামেরার সামনে বললেন, ‘আমরা মিলগেটে এত টাকা দরে বেচব। তারপর খুচরা বাজারে কী হয় আমরা জানি না।’ তেলদর্শিতা (নাকি দূরদর্শিতা) দেখাতেই হোক আর ভোটারদের উদ্দেশে কথায় তেল ভাজতে গিয়েই হোক, মন্ত্রী মহোদয় যা করেছেন তাতে রমজানের আগেই তেল-বাণিজ্য সরগরম।
কথা পায় না কথার ঠাঁই
এক· বিডিআরের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিরা জড়িত। দুই· বিডিআরের ঘটনায় জঙ্গিদের সঙ্গে বাইরের লোকও জড়িত। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে-জঙ্গিরা কি তাহলে বিডিআরের ভেতরের লোক? তিন· হত্যাযজ্ঞে জঙ্গিরা বিডিআরকে ব্যবহার করেছে। চার· পিলখানার ঘটনায় রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সম্পৃক্ত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই তদন্তে দেরি হচ্ছে। পাঁচ· হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারীদের নাম কয়েক দিনের মধ্যে জাতিকে জানানো হবে। ছয়· যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষতি চায়, তারাই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সাত····। থাক্! নাম তো ফারুক খান, ক্ষণে ক্ষণে তথ্যের গান। ওফ্, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা বোধহয় কনফিউজ।
হক কথা, টক কথা
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর তার ওপর কিছু আলোচনা তো হওয়া উচিত। ‘তদন্তের আগে কাউকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়’-আইনমন্ত্রী বলে কথা! ব্যাপক সাড়া। কথায় পেয়ে বসল তাঁকেও-‘কওমি মাদ্রাসা জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র।’ বেচারা শিক্ষামন্ত্রী! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে এত বড় তথ্য বাজারে ছাড়লেন আইনমন্ত্রী।
কাঁচা কথা
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে টিভি ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন-আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো যায়। ইতিমধ্যে দাম তো কমতে শুরুও করেছে। কথার মাঝখানে একজন সাংবাদিক বললেন, ‘আপা, এবার জঙ্গি নিয়ে কিছু বলেন।’ সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীঃ জি? ‘আপা, জঙ্গি নিয়ে···।’ ‘ও আচ্ছা, আমরা জঙ্গিদের রুটস খুঁজে বের করব। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা তাদের রেহাই দেব না। আমি জীবনবাজি রেখে হলেও তা করতে চাই। তাদের মদদদাতা, তাদের পেছনে যারা আছে···। আমরা, আমরা···’
সত্য কথা
লোডশেডিং বন্ধ করার মতো আলাদিনের চেরাগ আমার হাতে নেই-বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
কম কথা
পরিমিত কথা বলে ‘ভীতিকর অবস্থা’ তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইদানীং তাঁকে নাকি অনেকে বুঝতে পারে না। আর বেশি কথা বলে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করছেন কয়েকজন মন্ত্রী। তাঁদের কেউ ভুলতে পারছে না।
ব্যক্তিগত কথা
আমার এক বছর বয়সী মেয়ে নাবীহাকে খাওয়াতে হয় টেলিভিশন চালিয়ে। অনুষ্ঠান নির্ধারিত; বিজ্ঞাপন। ওরে···! কত কথা বলে রে···! জাতীয় বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে নির্বিঘ্নে খেলেও শুধু কথার অনুষ্ঠান (টক শো) তার চোখ টিভিতে আটকে রাখতে পারে না। আহ, বু বু বু বলে খেপে যায় সে।
মন্ত্রীরাও মানুষ
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী-‘মন্ত্রীদের কম কথা বলাটা আমিও পছন্দ করি। সরকারি দলের কাছে মানুষ কথা কম চায়, কাজ বেশি চায়। কথা বলার জন্য তো বিরোধী দল আছেই।’ আরও আছে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র। তবে তাঁর মুখে কথা শোনা দুষ্কর।
পাদটীকা
নগরে শব্দদূষণ বেড়েছে। এটি কথার কথা নয়, সাচ্চা তথ্য। মতিঝিলে ২০০৪ সালে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৯৬ ডেসিবল। এ বছর এ মাত্রা বেড়ে হয়েছে ১০৩। গত ৬ জানুয়ারি মতিঝিলের জনসংখ্যায় যুক্ত হয়েছেন ৪৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা-সহকারী। এই মতিঝিলেই তাঁদের দপ্তর-সচিবালয়।
শাহেদ মুহাম্মদ আলী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০০৯
Leave a Reply