এমনিতে টিভিতে বলা হয়-সকালের খবর, দুপুরের খবর, রাতের খবর। কিন্তু সকাল, দুপুর বা রাতের সঙ্গে এই খবরটার কোনো সম্পর্ক থাকে না। যদি সম্পর্ক বজায় রেখে খবরটা পরিবেশন করা হয়, তাহলে ব্যাপারটা
কেমন হয়, আসুন দেখা যাক। সংবাদগুলো পরিবেশন করছেন ইকবাল খন্দকার
সকালের খবর
এখন সকাল। কেউ কেউ হয়তো বস্ বা বউয়ের ঝাড়ির ভয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন। আবার যাঁরা একটু সাহসী, তাঁরা হয়তো এখনো সিদ্ধান্তই নেননি যে ঘুম থেকে ওঠা দরকার। যেসব বাসায় অধিকাংশ লোক উঠে গেছে, সেখানে টয়লেটে লম্বা লাইন লাগাটা স্বাভাবিক। এ ছাড়া পরোটার সঙ্গে সবজি হবে না হালুয়া হবে, এ নিয়েও বাগ্বিতণ্ডার সূচনা হতে পারে। হয়তো কোনো কোনো জায়গায় সূচনা হয়েও গেছে। তবে সঠিক খবর দিতে পারছি না। কারণ, আমাদের রিপোর্টার এখনো ঘুম থেকে ওঠেননি।
দুপুরের খবর
এখন দুপুর। ইতিমধ্যে ১২টা বেজে গেছে। অনেকেই হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছে দুপুরের খানাপিনার। বাইরে এখন প্রচণ্ড রোদ। এ জন্য বোধহয় এসির মধ্যেও গরম লাগছে। অনেকেই ঠান্ডা খাবারের জন্য ফ্রিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। কান ধরে সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য দুপুরের রোদ খুবই উপযোগী। এ সময়টা ছাদে যাওয়ার জন্য একদমই উপযোগী নয়। অতএব যাঁরা ছাদকে ফিল্ডিংয়ের স্পট হিসেবে ব্যবহার করেন, তাঁদের আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। যাঁরা দুপুরের প্রচণ্ড গরমে ঘুমিয়ে পড়েছেন, তাঁদের জন্য শুভনিদ্রা।
বিকেলের সংবাদ
এখন বিকেল। এমনই কোনো এক বিকেলকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল ‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে ফুল নিতে আসতে’ গানটি। আপনার বাসার সামনে বাগান থাকলে আপনিও হয়তো আড্ডায় মেতে উঠছেন বিশেষ কারও সঙ্গে। কেউ কেউ আবার নাশতার নামে জবরদস্ত খানা খেয়ে ফেলছেন। তবে অনেকেই দুপুরের ঘুমের রেশ কাটাতে না পেরে এখনো নাকে তীব্র আওয়াজ তুলে ঘুমাচ্ছে বলে জানা যায়। এ সময়টা জগিংয়ের কথা বলে সাংসারিক ঝামেলা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার মোক্ষম একটা সময়।
সন্ধ্যার সংবাদ
এখন সন্ধ্যা। সন্ধ্যা মানেই ছাত্রদের পড়তে বসার যন্ত্রণা। কিন্তু ঘাড় ত্যাড়া ছাত্ররা পড়তে বসছে না বলে তাদের মায়েরা লাঠির সন্ধান করছেন। কেউ কেউ আবার লোডশেডিংয়ের দোহাই দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে আড্ডা দেওয়ার জন্য। এ সময়টায় মশারা গণসংগীতে লিপ্ত হয়। পুঁটি মাছের আত্মাবিশিষ্ট স্বামীরা তাঁদের বাঘিনী গিন্নির ভয়ে যত দ্রুত সম্ভব সব কাজ সম্পন্ন করে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, মন্দার সঙ্গে সন্ধ্যার উচ্চারণগত সাদৃশ্য থাকলেও অন্য কোনো সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় বলে আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক জানান।
রাতের সংবাদ
এখন রাত। রাত মানেই ঘুম। আর ঘুম মানেই মশারি টানানো। এই মশারি টানানো নিয়ে অধিকাংশ দম্পতির মধ্যে ‘গালিক্ষয়ী’ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এর সূত্র ধরে অনেকের মধ্যে কোলবালিশ এবং টব বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে থাকে। রাতে ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে অনেকেই ভাত খায় না। তবে ভাতের পরিবর্তে এটা-সেটা যা খায়, তাকে বলা যায় ভাতের বাবা। রাতের চাঁদ যে কাউকে কবি বানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রেখে থাকে। তবে সেই কবিতা মানুষের মেজাজ বিগড়ানোর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।
মধ্যরাতের সংবাদ
এখন মধ্যরাত। জানি, সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, খবর শোনার কেউ নেই। তবু পড়ছি। কী করব, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মানলে আমার চাকরি থাকবে না। কেউ কেউ যে জেগে নেই, তা কিন্তু নয়। তবে যারা জেগে আছে, তারাও মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। রাত ১২টার পর ২৫ পয়সা মিনিট বলে কথা। যারা টিভি ছেড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে, সেসব অলসের জন্য বিশেষ গুডনাইট। সংবাদ এখানেই শেষ করছি। কারণ, আমারও ঘুম পেয়েছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১১, ২০০৯
Leave a Reply