মি· সোলায়মান হন্যে হয়ে একজন অ্যাকাউনট্যান্ট খুঁজছেন। তাঁর বাড়িতে পানি সরবরাহব্যবস্থায় তীব্র মন্দা চলছে। যখন লাইনে পানি আসে তা বিভিন্ন পাত্রে ধরে রাখা হয়, যা পরে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিপত্তিটা বাধে তখন, যখন ওই সংরক্ষিত পানির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি, পরে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। সমস্যা সমাধানে একজন অ্যাকাউনট্যান্ট খুঁজে আনেন মি· সোলায়মান। তিনি পরিবারের সব সদস্যের বয়স, অভ্যাস, পেশা প্রভৃতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কে কত মিমি পানি ব্যবহার করবে, এর তালিকা তৈরি করে দিয়ে যান। এই সমাধানে ঝামেলা মিটলেও হঠাৎ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, যখন ওই পরিবারের একজন সদস্য ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলো। তার পানির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের পানিবণ্টনব্যবস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উইকেটের মতো চোখের পলকেই ধসে পড়ল।
মি· সোলায়মানের পরিবারের মতো লাখো পরিবার এখন নাগরিক মন্দায় ভুগছে। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস-সবকিছুতেই যেন এক অদৃশ্য মন্দা লেগে গেছে। মন্দা শব্দটা হঠাৎ যেন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। খুব ব্যবহার হচ্ছে শব্দটির। এই তো সেদিন এক ঠোঁটকাটা ছাত্রের অভিযোগে স্যার খেপে উঠলেন, ‘তবে রে হতচ্ছাড়া! আমি ফাঁকি দিই? কম পড়াই? জানিস না, সারা দেশে এখন কী মন্দা চলছে! খবর রাখিস কিছু? পত্রিকা পড়িস? এমন মন্দায় একটু তো কমই পড়াব।’ দেখলেন তো, সবাই কেমন সুযোগ নিচ্ছে। ওই ছাত্রও কিন্তু কম যায় না। পরদিন সে স্কুলে এল অর্ধেক পড়া শিখে। কেন অর্ধেক পড়া শেখেনি এর উত্তরে সে স্যারকে বলল, ‘জানেনই তো স্যার, মন্দা চলছে। এখন কি আর পুরোটা শিখলে চলে?’ হুঙ্কার তুললেন স্যার, ‘দুই পা তুলে দাঁড়িয়ে থাক!’ বুদ্ধিমান (!) ছাত্রটি ‘স্যার, এখন তো মন্দা, দুই পা তুললে কি আর চলে’, বলে এক পা তুলে দাঁড়িয়ে গেল আর মনে মনে ভাবল, স্যারকে আজ ভালোই শিক্ষা দেওয়া গেল।
কোথায় যেন অর্থনীতি বিশ্লেষকের একটি সংজ্ঞা পড়েছিলাম। সেখানে লেখা ছিল, ‘অর্থনীতি বিশ্লেষক হচ্ছেন তিনি, যিনি আগামীকাল বলতে পারবেন যে তাঁর গতকালের করা ভবিষ্যদ্বাণীটি কেন ভুল ছিল।’ অতএব বুঝতেই পারছেন, তাঁদের কথার ওপর কতটা ভরসা করা যায়। একটা কুইজ শুনেছিলাম। কুইজটা এমন-অর্থনীতির বিশ্লেষক থাকায় কারা বেশি লাভবান হয়েছেন-ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, নাকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী? সঠিক উত্তর এল-আবহাওয়াবিদ।
কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলাম-আবহাওয়াবিদ!? ব্যাখ্যা শোনার পর যা বোঝা গেল তা এমন-আবহাওয়াবিদেরা যে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তা কদাচিৎ মেলে! এমন একটি বদনাম আবহাওয়াবিদদের ঘাড়ে অনেক দিন থেকেই আছে। কিন্তু এবার নাকি এই বদনাম এককভাবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ফলে এই বদনাম থেকে মুক্তি পেয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
সারা দুনিয়ার শেয়ারবাজারগুলোর অবস্থা দেখে এক বিনিয়োগকারী ভাবলেন, তিনি শেয়ারবাজারে আর বিনিয়োগ না করে অন্য কোনো ব্যবসা করবেন। পরামর্শের জন্য তিনি গেলেন একজন অর্থনীতিবিদের কাছে, যিনি বর্তমান বৈশ্বিক মন্দা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাঁর কাছে গিয়ে লোকটি বললেন, ‘আমি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে চাই, কীভাবে করব?’ অর্থনীতিবিদ পরামর্শ দিলেন, ‘প্রথমে আপনি একটি বৃহৎ ব্যবসা শুরু করুন; তারপর খুব শিগগির আপনি দেখতে পাবেন সেটি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।’
একবার কলম হাতে পেলে একটি বিষয় নিয়ে এক-আধটু খোঁচাখুঁচি না করলে তো পেটের ভাত হজমই হয় না। সেটি হলো বাংলা সিনেমা। বাংলা ছবির দর্শক মন্দা, অভিনেতা মন্দা, নির্মাতা মন্দা···আরও কত মন্দা। থাক! এসব কিছুই বলব না, কী লাভ! নায়িকার পোশাকেও তীব্র মন্দা-সবই আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। তবে কষ্ট লাগে আইপিএলের খেলা দেখতে বসলে। বিশ্বজুড়ে যে কী ভয়াবহ মন্দা চলছে, তা বোঝা যায় আইপিএলের চিয়ার্স গার্লদের পোশাক দেখলে-সত্যি, কষ্ট হয়!
মেহেদী মাহমুদ আকন্দ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০০৯
Leave a Reply