নিউইয়র্কের এক বাসিন্দা গিয়েছে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে। নির্দিষ্ট বোতাম চাপার পর পর্দায় ভেসে এল লেখাঃ ‘পর্যাপ্ত অর্থ নেই।’ লোকটি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। ফোন করল সে তার বান্ধবীকে।
বান্ধবী সব শুনে বলল, ‘পর্যাপ্ত অর্থ তোমার থাকলেও এটিএম বুথের অর্থাৎ ব্যাংকের নেই।’
২০০৮ সালের শেষভাগ থেকে আমেরিকায় আর্থিক সংকট শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যাংকে ধস নামে। আমানত হারানো মানুষজন তাই এখন এ রকম নানা কৌতুক করে নিজেদের সান্ত্বনা খুঁজে বেড়াচ্ছে।
মন্দার ইতিহাস অবশ্য বলে যে আর্থিক সংকটের সঙ্গে হাসি-তামাশার একটি সহসম্পর্ক রয়েছে। ১৯৩৩ সালে মহামন্দার সময় নিউইয়র্ক সান পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয় যে এই মহা বিপর্যয়ের সময়ও কেউ কেউ ঋণ দিতে রাজি। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত হলো, ঋণগ্রহীতার বয়স ৮০ বছরের বেশি হতে হবে। এটাই শেষ নয়। দ্বিতীয় বা পর্যাপ্ত শর্ত হলো, ঋণগ্রহীতার সঙ্গে তার পিতামহকে থাকতে হবে। (অর্থনীতিতত্ত্বের প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত শর্তের বিধিটি ্নরণযোগ্য)।
আর্থিক সংকট থেকে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ যেমন উত্তর আমেরিকা থেকে মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আঘাত হেনেছে, এসব ঠাট্টা-মশকরাও যেন মুহূর্তে সীমানা ছাড়িয়ে পড়েছে। আর দুটোই ঘটেছে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকৃষ্ট যোগাযোগের কল্যাণে! বিশ্বের আর্থিক বাজারগুলো আজ অনলাইন-ব্যবস্থায় পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। টোকিওতে বসে নিউইয়র্ক বা ফ্রাংকফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারের ব্যবসা করা যায়। তাই তো এক বাজারের বিপর্যয় ভাইরাসের মতো আরেক বাজারে আঘাত হানে। একইভাবে আমেরিকার কৌতুক সিঙ্গাপুরেও মানুষের মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এবং শেয়ারবাজারে।
শেয়ারবাজারে ক্রমাগত ধসে কপর্দকশূন্য হয়ে একজন আর্তকণ্ঠে বলে উঠল, ‘হায় ঈশ্বর! এটা তো তালাকের চেয়ে খারাপ অবস্থা!’
মন্দায় সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো, যাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে ফাটকাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং লোকসান গুনেছে। তাই এখন এসব ব্যাংকের কর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ সবাই। এ রকম দুই ক্ষিপ্ত ব্যক্তি পরস্পর আলাপ করছিল ওয়ালস্ট্রিটে দাঁড়িয়ে। একজন বলল, ‘আচ্ছা, বলো তো দেখি, একটা পিৎজা আর একজন বিনিয়োগ ব্যাংকারের মধ্যে পার্থক্য কী?’
দ্বিতীয়জন বলল, ‘এ আবার কেমন প্রশ্ন? দুটোর মধ্যে তুলনা করব কীভাবে?’
‘আরে নির্বোধ, একটা পিৎজা দিয়ে আমাদের একটা পরিবারের এক বেলা খাওয়া হয়। কিন্তু একটা বিনিয়োগ ব্যাংক একজন মানুষের ক্ষুধাও মেটাতে পারছে না।’
বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা বোঝার জন্য আর্থিক বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্র (ব্যালেন্সশিট) দেখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ নেই বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, উদ্বৃত্তপত্রের লেফট সাইড (বাঁ পাশে) আসলে কিছু (লেফট) নেই। আর রাইট সাইডে (ডান পাশে) আসলে কিছুই ঠিক (রাইট) নেই। এই যখন দুরবস্থা তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। তাতে আরেক উদ্ভট পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেশির ভাগ ব্যক্তিই এমবিএ (ব্যবসায় প্রশাসনে মাস্টার্স) ডিগ্রিধারী। তাঁরা নাকি এখন দলে দলে ছুটে যাচ্ছেন ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। উদ্দেশ্য হলো, ডিগ্রি ফেরত দিয়ে অর্থ ফেরত নেওয়া। এই মন্দার সময় কাজ যখন নেই, তখন আক্ষরিক অর্থেই ডিগ্রি বেচে যদি কিছু নগদ অর্থ হাতে আসে, মন্দ কী!
অবশ্য জনগণের হাতে নগদ অর্থ দিয়ে চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা করছে মার্কিন সরকার; বলছে, আমেরিকার তৈরি পণ্য কিনতে যেন দেশের মধ্যেই অর্থ খরচ করা হয় এবং তা যেন দেশে থাকে।
‘কিন্তু আমাদের জন্য কাজটি আসলে খুব কঠিন,’ বললেন একজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ।
‘কেন?’ ‘যদি আমরা ওয়ালমার্টে গিয়ে কাপড় কিনি, তাহলে ডলার চলে যাবে চীনে। যদি গাড়ির জন্য তেল কিনি, ডলার যাবে মধ্যপ্রাচ্যে। যদি কম্পিউটার কিনি, ডলার যাবে ভারতে। যদি ফলমূল ও সবজি কিনি, তাহলে ডলার যাবে মেক্সিকোতে। আর যদি গাড়ি কিনি, তাহলে ডলার যাবে জাপানে।’
‘সর্বনাশ! তাহলে উপায় কী?’ ‘উপায় আছে। লাস ভেগাসে গিয়ে জুয়া খেলে ডলার উড়িয়ে দাও, পানশালায় যাও। সব ডলার দেশেই
থাকবে।’
[ওয়েব অবলম্বনে]
আসজাদুল কিবরিয়া
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৪, ২০০৯
Leave a Reply