ঢাকা শহরে মানুষ এখন প্রায় দুই কোটি। শহরের আনাচ-কানাচে যে যেখানে পারছে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নিচ্ছে। প্রচণ্ড গরম, পানি সমস্যা, যানজট-এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এসবের মধ্যে অনেকেই তাদের কাঙ্ক্ষিত মানুষকে খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হয়ে পড়ে। ঢাকা শহরে এলাকাভিত্তিক মানুষ বিন্যাস করলেই কিন্তু এ সমস্যা আর থাকে না। চলুন, সেই রকম কিছু বিন্যাসকৃত এলাকা দেখা যাক। শহর ঘুরে সেটাই জানাচ্ছেন রাকিব কিশোর।
মিরপুর
শুধু মির বংশীয় লোকজন এ এলাকায় থাকবেন। অন্য কোনো বংশ বা গোত্রের লোক এখানে থাকতে পারবেন না। যাঁদের নামের আশপাশে মির কথাটি যুক্ত থাকবে, তাঁরা এই এলাকার বাসিন্দা হতে পারবেন। যেমনঃ মির কাশেম
মহাখালী
যাঁরা সব হারিয়েছেন, একেবারে নিঃস্ব-জমিজিরাত এমনকি ঘটিবাটিও পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা যাঁদের নেই, তাঁরাই এই এলাকায় থাকবেন।
(বি· দ্র·)-যাঁরা প্রথম প্রথম বা নতুন নতুন সর্বহারা বা একেবারে খালি হয়েছেন, তাঁরা তাঁদের নিবাসস্থল হিসেবে নোয়াখালীকে বেছে নিতে পারেন।
কল্যাণপুর
দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় যাঁরা সব সময় নিজেদের নিয়োজিত রাখেন, তাঁরাই কেবল এ এলাকায় অবস্থানের সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা অগ্রাধিকার পাবেন।
নীলক্ষেত
প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ে ছ্যাঁকা খেয়ে যাঁরা ব্যথা-বেদনায় নীল হয়ে গেছেন, যাঁরা একটু নড়াচড়া করলেই বিগত প্রেমের ব্যথা ঝিলিক মেরে বের হয়ে আসে-তাঁরাই হতে পারেন নীলক্ষেত এলাকার নাগরিক।
মগবাজার
যাঁদের বাসায় এত এত মগ আছে, যা দেখলে যে কেউ আপন মনে বলে ওঠে, ‘এ তো রীতিমতো মগের মল্লুক দেখছি’, কেবল সেসব পরিবারই মগবাজার এলাকায় নিজস্ব আবাসভূমি গড়ে তুলতে পারে।
মালিবাগ
বাগান থাকুক বা না থাকুক, যাঁরা জীবনে একবার হলেও বাগানে এক দিনও কাজ করেছেন, অথবা কমপক্ষে এক হাজার গাছ লাগিয়েছেন, তাঁরাই মালিবাগকে আপন করে নিতে পারেন।
সদরঘাট
যেসব লোক সবাইকে দেখান যে তাঁরা অনেক বড়লোক, কিন্তু আদতে তাঁদের কিছুই নেই, ভেতরে পুরোপুরি সদরঘাট, কেবল তাঁরাই এ এলাকায় থাকার ভিসা পাবেন।
কচুক্ষেত
যাঁরা জীবনে সব ক্ষেত্রে পরাজিত, যেখানে গেছেন শুধু কচুই দেখেছেন, কিছুই পাননি এ ভুবনে, কেবল তাঁরাই কচুক্ষেতে রাত কাটাতে পারেন।
(বি· দ্র·)-এখানেও যদি কেউ বিছানা-বালিশ কেড়ে নিয়ে আপনাকে কচু দেখায়, তাহলে আপনি কচুক্ষেতের এলিট শ্রেণী হিসেবে আজীবন সম্মাননা পাবেন।
যাত্রাবাড়ি
নাটক সিনেমার এই যুগে দেশ থেকে যাত্রা উঠেই যেতে বসেছে। এখনও অনেকে আছেন যারা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। অতীতে যাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং বর্তমানে আছেন এমন লোকরাই এখানে বসবাস করতে পারবেন।
বনানী
যাঁদের নানি এখনো জীবিত, কেবল তাঁরাই নানিসহ এ এলাকায় থাকতে পারবেন। নানি গত হয়ে গেলেই তাঁরা র্যাংকিং অনুযায়ী ঢাকার অন্য যেকোনো জায়গায় শিফট হতে পারবেন।
গুলশান
চাপাবাজিতে বা গুলমারার ক্ষেত্রে যাঁরা নিজেদের অসীম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, যাঁদের একনামে সারা দেশের পোড় খাওয়া মানুষ চেনে, কেবল তাঁরাই এই স্থানে বসবাসের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন।
শান্তিনগর
বাংলাদেশে শান্তি একটি আপেক্ষিক ধারণামাত্র। তবুও যাঁরা ভাবেন যে অনেক শান্তিতে আছেন, তাঁদের জন্য এই এলাকা। তবে ঢাকা শহরের যে অবস্থা তাতে কোনো প্রকৃত লোক পাওয়া যাবে না যে এই এলাকার আসল বাসিন্দা হতে পারেন।
ফার্মগেট
যেসব লোক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে গাধা, গরু উপাধি পেয়েছেন, কেবল তাঁরাই হবেন ঢাকার এই খামার অংশের উপযুক্ত দাবিদার। জীবনে দুঃসাহসী কাজ করে যাঁরা বাঘের বাচ্চা ও সিংহের বাচ্চা উপাধি অর্জন করেছেন, তাঁরাও অগ্রাধিকার পাবেন। বাংলা সিনেমার নামকরা নায়িকারা যখন ইচ্ছে এখানে বেড়াতে আসতে পারেন। তবে খুব সাবধানে, আশপাশের লোকজন যেন উঠে না যায়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২৭, ২০০৯
Leave a Reply