অনেক বছর আগের কথা। অনেক গ্রামেই তখন অতিথিশালা ছিল। সেই অতিথিশালায় একবার রাত কাটাতে এল গোপাল নামের সহজ-সরল এক লোক। খাওয়াদাওয়া শেষ করে গোপাল যখন বিশ্রাম নিচ্ছে, তখনই সেখানে আরেকজন অতিথি এল। নাম তার হরিপদ। কুশল-বিনিময়ের পর তারা দুজনই ঘুমিয়ে পড়ল। গভীর রাতে কিসের যেন শব্দে গোপালের ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখল, ঘরে কে যেন হাঁটাহাঁটি করছে, জিনিসপত্র নাড়াচাড়া করছে। গোপাল ভালো করে তাকিয়ে দেখল, ঘরের ভেতর হরিপদ হাঁটছে। শুধু হাঁটছেই না, ঘরের জিনিসপত্র সব তার ঝোলার মধ্যে ভরছে। এমনকি গোপালের জামা আর জুতো জোড়াও! হরিপদ যে একটা চোর, গোপালের তা বুঝতে আর বাকি রইল না। সে ঘুমের ভান করে পড়ে রইল। সবকিছু নিয়ে হরিপদ যখন বেরোতে যাবে, তখন গোপাল ছুটে গিয়ে তাকে জাপটে ধরে চোর চোর বলে চেঁচাতে লাগল। হরিপদ বুঝল সে ধরা পড়ে গেছে। বাঁচার জন্য সেও চোর চোর বলে চেঁচাতে লাগল। বাড়ির লোকজন এসে দেখে, দুজনই চোর চোর বলে চিৎকার করছে। গোপাল বলে হরিপদ চোর, হরিপদ বলে গোপাল চোর। বাড়ির লোকজন খুব সমস্যায় পড়ল। বাড়ির কর্তা বলল, ‘দুজনকেই রশি দিয়ে বাঁধো।’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের গাছের সঙ্গে বাঁধা হলো। কিন্তু আসল চোর কে কিছুতেই বের করা যাচ্ছে না। তখন বাড়ির কর্তা দুজনের ঘাড়ে একটা লাশ উঠিয়ে দিয়ে শ্মশানে যেতে বলল। লাশ নিয়ে যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে গোপাল বলল, ‘জীবনে কী পাপ যে করেছিলাম! চোর ধরতে গিয়ে শেষে নিজেই চোর বনে গেলাম।’ তখন হরিপদ বলল, ‘তোমার জন্যই তো হলো না। কী সুন্দর চুরি করছিলাম, তুমি আমাকে ধরে সব মাটি করে দিলে। এখন বোঝো মজা!’
হরিপদের কথা শুনেই হঠাৎ লাশটা বলে ওঠে, ‘ওই ব্যাটা হরিপদ চোর, থাম। আমাকে নিচে নামা।’
এভাবেই বাড়ির কর্তার বুদ্ধিতে চোরটা ধরা পড়ে।
— সংগ্রহেঃ মুশফিকুর রহমান, সোনাডাঙ্গা, খুলনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply