দুই ভাইয়ের মধ্যে মধু বড়, কদু ছোট। মধু খুব লোভী। পক্ষান্তরে কদু অল্পতে তুষ্ট। মধু জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে, আর কদু বন থেকে কাঠ কেটে এনে তা বিক্রি করে। এক বর্ষার দিনে কদু বনের অনেক ভেতরে গেল কাঠ কাটতে। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি নামায় সে একটি গুহার মধ্যে আশ্রয় নিল। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণই নেই। কদু দিল এক ঘুম। যখন ঘুম ভাঙল তখন অনেক রাত, বৃষ্টি থেমে গেছে। গুহার বাইরে নূপুরের আওয়াজ। ভয়ে ভয়ে বাইরে বের হয়ে কদু দেখল, একদল পরি রিনিঝিনি শব্দে তন্ময় হয়ে নাচছে। কদুকে দেখতে পেয়ে তারা তাকেও সঙ্গে নাচতে বলল। কী আর করা! কদু ভয়ে ভয়ে নাচতে শুরু করল। কদুর নাচ দেখে পরিরা খুব খুশি। কদুকে এক থলে সোনার মোহর দিয়ে পরিরা বলল, তারা প্রতি রাতে নাচে। সেও যেন আসে। কদু পরের দিন আসতে রাজি হলো। হঠাৎ এক পরি বলে উঠল, ‘ওকে বিশ্বাস নেই। এর চেয়ে ওর কাছ থেকে ওর একটা মূল্যবান জিনিস রেখে দিই, যার জন্য হলেও ও আসবে।’ সব পরি এ কথায় সম্মত হলো। কদুর বাঁ কানে বড় ধরনের একটা টিউমার ছিল, যার জন্য তাকে খুব বিশ্রী দেখাত। কিন্তু পরিরা মনে করল, ওটা বুঝি তার শরীরেরই প্রয়োজনীয় একটা অঙ্গ। কদুর বাঁ কান থেকে ব্যথাহীনভাবে টিউমারটা তুলে নিয়ে পরিরা তাকে বলল, ‘কাল যদি না আসো, তবে এটা পাবে না।’ কদু মহা খুশি হয়ে বাড়ি ফিরে এল। একদিকে টিউমার নেই, অন্যদিকে সোনার মোহর। সে সবার কাছে ঘটনাটা বলল। কদুর বড় ভাই মধুরও বাঁ কানে বড় ধরনের একটা টিউমার ছিল। আর সোনার মোহরের লোভ তো আছেই। পরদিন মধু রাতের বেলা বনে গেল। গভীর রাতে পরিরা নাচতে এল। মধুও তাদের সঙ্গে নাচল। কিন্তু মধুর নাচ পরিদের খুশি করতে পারল না। তারা কদুর টিউমারটি মধুর ডান কানে বসিয়ে দিল। এখন কানের দুলের মতো মধুর ডান ও বাঁ কানে শোভা পায় দুটি টিউমার!
— সংগ্রহেঃ সঞ্জয় দেবনাথ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply