জামাই শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কোনো কথা বলে না। শালা-শালিরা কত ঠাট্টা-তামাশা করতে আসে, সে কোনো উচ্চাবাচ্য করে না। শ্বশুর গিয়ে জামাইয়ের বাপকে বলল, ‘দেখুন, আপনার ছেলে আমাদের বাড়িতে এসে চুপ করে বসে থাকে, কোনো কথাবার্তা বলে না। সবাই বলে জামাই বোকা।’
বাপ বলল, ‘আমার ছেলে তো বাড়িতে বেশ ভালোমতোই কথাবার্তা বলে! আচ্ছা, তাকে আমি বেশ করে ধমকে দেব।’
বাড়ি এলে বাপ ছেলেকে ডেকে বলল, ‘কিরে, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কথাবার্তা বলিস না কেন? সেখানে গিয়ে সবার সঙ্গে আলাপসালাপ করবি। শালা-শালিদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করবি, তবেই না লোকে বলবে, বেশ ভালো জামাই!’
ছেলে মাথা নত করে রইল। বাপ বুঝল এবার ছেলে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কথা বলবে।
ঈদের ছুটিতে জামাই শ্বশুরবাড়ি এসেছে। এসে বৈঠকখানার এক কোণে চুপ করে বসে আছে। শ্বশুর এসে জিজ্ঞেস করল, ‘কী বাবাজি, চুপ করে বসে আছ কেন? বাড়িতে সবাই ভালো তো?’
জামাই উত্তর দিল, ‘ভালো আর আছে কই? কয় দিন হলো আমার বাপের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। হাতে একখানা লাঠি নিয়ে যাকে দেখেন তাকেই মারতে আসেন।’
শ্বশুর বলল, ‘তবে তো খুব খারাপ কথা, আমি কালই তোমার বাবাকে দেখতে যাব।’
জামাই বলল, ‘শ্বশুর সাহেব, যাবেন যে খুব সাবধানে যাইয়েন। একটা লাঠি হাতে নিয়ে ঘুরাইতে ঘুরাইতে যাইয়েন। আমার বাবা যদি আপনাকে মারতে আসেন, লাঠি উঠিয়ে তাঁকে মারতে যাবেন। দু-একটা লাঠির ঘা মাথায় পড়লে বাবা শান্ত হয়ে যাবেন। তারপর আর কিছু বলবেন না।’
শ্বশুর বললেন, ‘আচ্ছা, আমি তা-ই করব, কাল সকালে তোমার বাবাকে দেখতে যাব।’
জামাই শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এল। বাপ জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি কেন?’
ছেলে বলল, ‘ফিরে না এসে উপায় কী? আমার শ্বশুরের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যাকে দেখেন, তাকেই লাঠি ঘুরিয়ে মারতে আসেন।’
বাপ বলল, ‘তবে তো খুবই খারাপ খবর! কাল সকালেই তোর শ্বশুরকে দেখতে যাব।’
ছেলে বলল, ‘আপনি যে যাবেন, খুব সাবধানে যাবেন। একখানা লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে যাবেন। আমার শ্বশুর যদি আপনাকে মারতে আসেন, লাঠির কয়েক ঘা তাঁর গায়ে মারবেন। তিনি তখনই থেমে যাবেন। কিন্তু কয়েক ঘা মারলে তিনি আপনাকে মারতেই থাকবেন। সাবধান, সঙ্গে লাঠি না নিয়ে যাবেন না।’
পরদিন সকালে দুই গ্রাম থেকে বাপ আর শ্বশুর লাঠি ঘোরাতে ঘোরাতে বের হলো, মাঝপথে এসে দুই বেয়াইয়ের দেখা। শ্বশুর লাঠি উঁচু করে বলল, ‘এই!’ বাপও তেমনি লাঠি ঘুরিয়ে বলল, ‘এই!’ তারপর দুই বেয়াইতে লাঠিপেটাপেটি আরম্ভ হলো। সে কি যেমন-তেমন মারামারি! পাড়ার লোকেরা ছুটে এসে দুই বেয়াইকে আলাদা করে ধরে রাখল। তারপর বলল, ‘তোমাদের হলোটা কী! দুই বেয়াইয়ের মধ্যে এমন ভাব-মহব্বত। এখন এভাবে তোমাদের মারামারির কারণ কী?’
শ্বশুর তখন বলল, ‘কাল জামাইয়ের মুখে শুনলাম বেয়াই পাগল হয়ে গেছে। যাকে দেখে তাকেই মারতে আসে, আর লাঠি দিয়ে দুই-এক ঘা মারলেই নীরব হয়ে যায়।’ বাপ বলে, ‘ওই শয়তান ছেলে বেয়াইয়ের বিষয়ে এমন কথা আমাকেও বাড়ি এসে বলেছে!’
এখন দুই বেয়াই একে অপরের সঙ্গে আলাপ করে সব জানতে পারল। বাপ বাড়ি ফিরে ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল, ‘ওরে বেল্লিক বেহায়া! তোর শ্বশুর সম্বন্ধে এমন মিথ্যে কথা আমাকে বলেছিলি কেন?’
ছেলে বিনীতভাবে উত্তর দিল, ‘আপনি আমাকে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কথাবার্তা বলতে উপদেশ দিয়েছিলেন, আমি সেখানে গিয়ে একটিমাত্র কথা বলেছি তাতেই এত! অনেক কথা বললে না-জানি কী হতো!’
— সংগ্রহেঃ রুকাইয়া আঞ্জুমান, কলাপাড়া, বরিশাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply