তাঁতি আর তাঁতির বউয়ের ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সমস্যা একটাই-তাঁতি যে বড্ড বোকা। ব্যাপারিরা এসে তাঁতির কাছ থেকে খুবই কম দামে কাপড় নিয়ে যায়। একবার তাঁতির শালাবাবু বেড়াতে এসে এ অবস্থা দেখে বলে, ‘আপনি নিজেই হাঁটে গিয়ে কাপড় বিক্রি করুন না, তাতে আর ঠকতে হয় না।’
বুদ্ধিটি তাঁতির মনে ধরল। তিনি তাঁর নৌকাটি পরিষ্কার করে একটি ছড়ি দিয়ে ঘাটে বেঁধে রাখলেন। ভাবলেন, রাতে রওনা হবেন।
রাতে তাঁতি কাপড়ের বোঝা নৌকায় রেখে নৌকা চালাতে শুরু করলেন। কিন্তু সমস্যা কিছু একটা হয়েছে, তাঁতি তা বুঝতে পারলেন না। তিনি নৌকা বেয়ে একটু সামনে যান, আবার স্রোতে ভেসে পিছিয়ে আসেন। এভাবে তিনি সারা রাত নৌকা চালালেন। খানিকটা এগিয়ে যান, আবার পিছিয়ে যান। এভাবে তিনি একটুও সামনে যেতে পারেন না। কিন্তু তিনি ভাবলেন, তিনি বুঝি অনেকখানি চলে এসেছেন।
সকালে এক মহিলাকে নদীতে পানি নিতে দেখে তাঁতি বলেন, ‘মা জননী, এটা কোন ঘাট গো?’ তাঁতি নৌকা চালাতে এত মগ্ন ছিলেন যে ওই মহিলা যে তাঁর বউ তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। তাঁতির বউ রেগে বললেন, ‘তবে রে মিনসে, ভীমরতি হয়েছে নাকি?’ পরক্ষণেই তাঁতির হুঁশ ফিরল। তিনি বউকে চিনতে পেরে বললেন, ‘আচ্ছা বউ, সারা রাত নৌকা বাইলাম, কিন্তু একটুও এগোতে পারলাম না কেন?’
তাঁতির বউ বললেন, ‘বলি নৌকা যে বাইলে, নৌকার দড়ি খুলেছিলে?’
তাঁতি দেখলেন, তাই তো। নৌকা তো এখনো খুঁটির সঙ্গে বাঁধা রয়েছে।
— সংগ্রহেঃ ফাহমিদা আলম, মিরপুর, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply