চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এক ব্যক্তি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেনঃ ‘ভাইসব, আমি যদি নির্বাচনে জিততে পারি, আমি এলাকার উন্নয়ন করব। নতুন রাস্তা করব, কাঁচা রাস্তা পাকা করব। আমার যা কিছু আছে তার সবই আপনাদের কল্যাণে ব্যয় করব। আমাকে ভোট দিন।’ সবাই তাঁকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান বানায়।
মাতৃহীন কন্যা ও কাজের বুয়া নিয়েই নতুন চেয়ারম্যানের সংসার। চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে বুয়াকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনের আগে গ্রামবাসীকে আমার যা কিছু আছে সবই দেব বলেছি। তুমি কিন্তু কিছুই দেবে না।’ এই বলে চেয়ারম্যান গঞ্জে চলে যান।
গ্রামের আবুল এসে বলে, ‘চেয়ারম্যান সাব বাড়িতে আছেন নিকি, ও চেয়ারম্যান সাব?’
কাজের বুয়া বলে, ‘চেয়ারম্যান বাড়িতে নাই, কী লাগবে কও।’ আবুল জানায়, তার ছোট মেয়ের অসুখ, হাসপাতালে নিতে হবে।
কাজের বুয়া বলে, ‘তাতে চেয়ারম্যান সাবের কী?’ আবুল বলে, ‘মানে চেয়ারম্যান সাবের সাইকেলটা যদি দেতেন।’ কাজের বুয়া বলে, ‘অত সব ভঙ্গি করে লাভ নাই। চেয়ারম্যান সাব সাইকেল দিতে মানা করেছেন।’
আবুল রাগত স্বরে ‘কী! এত বড় কথা, নির্বাচন আসুক, দেখবানে’ বলে চলে যায়।
রাতে চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে বুয়াকে জিজ্ঞেস করেন। বুয়া বলে, ‘আবুল আইসা সাইকেল চাইল। আমি বলছি, সাইকেল দেওয়া যাবে না। আপনার মানা আছে।’ চেয়ারম্যান বলে, ‘করছস কী! বলবি, সাইকেল চলে না। ব্রেক নষ্ট, স্পোক ভাঙ্গা, পাম নাই ইত্যাদি ইত্যাদি।’
পরের দিন চেয়ারম্যান সকালেই গঞ্জে চলে গেলেন। গ্রামের মদন আসে চেয়ারম্যানের গরুটা ধার নেওয়ার জন্য। ওর হালের গরু মারা গেছে। কাজের বুয়া বলে, ‘গরু চলে না, গরুর স্পোক ভাঙ্গা, গরুর ব্রেক ফেল ইত্যাদি।’ মদন বলে, ‘এসব কী, চেয়ারম্যান গরু দিব না, তাই কও। সামনের নির্বাচনে চেয়ারম্যান কীভাবে জিতে দেখবানে।’
চেয়ারম্যান রাতে বাড়িতে এলে বুয়া বিস্তারিত সব বলে। চেয়ারম্যান হায় হায় করে বলেন, ‘করছস কী! আমারে তো ডুবাবি।’ তিনি যথারীতি বুয়াকে বোঝান, ‘কেউ আসলে বলবি, গরুর পিঠে ফোঁড়া, পা খোঁড়া, চলতে পারে না।’
পরদিন হবু বেয়াই ঘটক নিয়ে চেয়ারম্যানের মেয়েকে দেখার জন্য এল। উল্লেখ্য, আগেই বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে গিয়েছিল। কাজের বুয়া জানায়, ‘চেয়ারম্যান গঞ্জে গেছে। কী লাগবে আমারে কন।’
কাজের বুয়ার কথা শুনে ঘটক আমতা আমতা করে বলে, ‘চেয়ারম্যানের কন্যা···।’ অমনি কথা কেড়ে নিয়ে বুয়া বলে, ‘চেয়ারম্যানের মেয়ের পিঠে ফোঁড়া, পা খোঁড়া, চলতে পারে না।’
এ কথা শুনে হবু বেয়াই বিয়ে ভেঙে দেন। যাওয়ার আগে গ্রামবাসীকে সব খুলে বলেন। রাতে চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করলে বুয়া সব স্বীকার করে। চেয়ারম্যান বুয়াকে মারতে মারতে বিদায় করে দেন। তারপর রাতের অন্ধকারেই বাপ ও মেয়ে দেশান্তরি হন।
— সংগ্রহেঃ সাকিব হাসান, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply