এক রাজ্যে নালু নামে একজন লোক ছিল। সব সময় সে মানুষকে ঠকাত। একদিন রাজদরবারে গিয়ে নালু বলল, মহারাজ, আমি রাজ্যের প্রায় সব মানুষকে ঠকিয়েছি। আমার শেষ ইচ্ছা, আপনাকে ঠকাব। রাজা বলল, ঠিক আছে, তুমি আমাকে ঠকাও দেখি। নালু বলল, মহারাজ, আজকে আমি ঠকানোর যন্ত্রপাতিগুলো বাড়িতে রেখে এসেছি। আপনার ঘোড়াটি দিলে তাড়াতাড়ি যাব আর আসব। রাজা নালু ঠগকে তাঁর ঘোড়াটি দিলেন। নালু ঘোড়ায় করে বাড়ি চলে এল। এদিকে রাজা অপেক্ষায় আছেন, কখন নালু ঠগ তার সঙ্গে ঠকবাজি খেলা খেলবে। অনেকক্ষণ হলেও নালু ঠগের পাত্তা নেই। রাজা অস্থির হয়ে নালু ঠগের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন, এদিকে নালু তার মাকে বলল, মা, আমি রাজাকে ঠকাব। রাজা যখন আসবে তখন তুমি এই বাঁশি বাজাবে, আমি অমনি উঠে দাঁড়াব। রাজা এই বাঁশি আমাদের কাছ থেকে অনেক স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে কিনে নেবেন। নালু তার গলায় লাল রং মেখে বিছানায় শুয়ে রইল। রাজা যখন তাঁর বাহিনীসহ নালুর বাড়িতে এলেন, অমনি নালুর মা বাঁশি বাজাতে লাগল। রাজা ভাবলেন, নালুর গলায় রক্ত, নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তাকে জখম করেছে। নালুর মা বাঁশি বাজাতে বাজাতেই নালু বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। রাজা দেখে অবাক হলো, এ কেমন বাঁশি, মরা মানুষ ভালো হয়। সেনাপতি বলল, মহারাজ, এই বাঁশি আমাদের হাতে রাখতে পারলে আর কোনো দিন কোনো সেনা মরবে না। রাজা নালুকে বলল, তোমার বাঁশিটা আমাকে দিয়ে দাও। নালু বলল, না মহারাজ, এটা আমার জীবন, আমি কোনো দিন মরব না, যতবার মরব ততবার জীবিত হব। রাজা বলল, বাঁশিটার পরিবর্তে এই নাও এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা। কয়েক দিন পর রাজা তার সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে গেলেন। তাদের বললেন, তোমরা সবাই জীবন দিয়ে যুদ্ধ করবে, মরার চিন্তা করবে না। তোমরা মরলে আমি এই বাঁশি বাজালেই আবার জীবিত হয়ে যাবে। যুদ্ধ চলতে থাকল, রাজার অর্ধেক সেনা মারা গেল। তখন রাজা বাঁশি বাজাতে লাগলেন। কিন্তু কোনো সেনা জীবিত হলো না। পরাজিত হয়ে রাজ্যে ফিরে এসেই রাজা বস্তায় ভরে নদীর মধ্যে ফেলে নালু ঠগকে হত্যার আদেশ দিলেন। রাজার দুজন সেনা তাকে বস্তায় ভরে নদীর ধারে নিয়ে যাচ্ছিল। নালু ঠগ বস্তার ভেতরে বলতে লাগল, স্বর্গের হুররা, চিন্তা কোরো না, কিছুক্ষণের মধ্যে আমি তোমাদের মাঝে এসে পৌঁছাব। সেনা দুজন নদীর ধারে গিয়ে ভাবল, এই নদী দিয়ে মনে হয় স্বর্গে যাওয়া যায়। তাই এক সেনা অন্যজনকে বলল, তুমি চলে যাও, একাই আমি এই বস্তা নদীতে ফেলে দিতে পারব। দুজন স্বর্গে যাওয়ার বুুদ্ধি করে একজন আরেকজনকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। তখন নালু ঠগ বলল, ঠিক আছে, তোমরা দুজন স্বর্গে যাও, আমি পরে যাব। দুই সেনা মহা খুশি হলো। নালু বলল, আমাকে বস্তা থেকে বের করে তোমরা বস্তায় ঢুকে পড়ো। তারা তা-ই করল। নালু ঠগ দুজনকে দিল নদীর মধ্যে ফেলে। তারপর নালু ঠগ বাড়িতে গিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে রাজদরবারে এসে হাজির হলো। রাজা নালু ঠগকে দেখে আশ্চর্য হলো। নালু ঠগ বলল, মহারাজ, আমি স্বর্গ থেকে উঠে এলাম আপনার সঙ্গে দেখা করতে। রাজা ভাবলেন, আমিও নালুর সঙ্গে স্বর্গে চলে যাই। তিনি নালু ঠগকে বললেন, ভাই নালু, আমাকে একবার স্বর্গে নিয়ে যাও। নালু বলল, ঠিক আছে, আজ ভোরে স্বর্গে চলে যাব। রাজা নালুর সঙ্গে রওনা দিল। নদীর ধারে এসে নালু বলল, মহারাজ, আমি আপনাকে স্বর্গের মধ্যে ফেলে দেব। তাই বস্তায় ঢুকে যান। রাজা স্বর্গ দেখার লোভে বস্তায় ঢুকল। নালু বস্তা ভালো করে বেঁধে বলল, মহারাজ, আপনাকে ঠকাতে চেয়েছিলাম। একের পর এক ঠকিয়েছি, এবার আপনি নদীতে যান, আমি হব এই রাজ্যের রাজা-বলে রাজাকে দিল নদীর মধ্যে ফেলে। নালু এসে রাজসিংহাসনে বসল। নালু ঠগ রাজ্যের রাজাকেও ঠকিয়ে রাজা হয়ে গেল।
— সংগ্রহেঃ ওবাইদুর রহমান, দিনাজপুর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply