এক ছিল বুড়ো আর এক ছিল বুড়ি। তারা ভারি গরিব। বুড়ি বেজায় বোকা। আর ভয়ানক বেশি কথা বলে। যেখানে-সেখানে যার-তার সঙ্গে জুড়ে দেয় গল্প। বুড়ো একদিন তার জমি চষতে চষতে মাটির নিচে একটি কলসি পেল। সেই কলসি টাকা-পয়সা ভরা। সে চিন্তা করল, এটা বাড়িতে নিয়ে গেলে বুড়ি টের পেয়ে যাবে, সবাইকে সে বলে দেবে। তা ভেবে ভেবে সে এক ফন্দি আঁটল। সে ঠিক করল, বুড়িকে সে বলবে কিন্তু এ রকম উপায় করবে, যাতে বুড়ির কথা কেউ বিশ্বাস না করে। তখন সে একটা মাছ কিনে এনে তার ক্ষেতের ধারে একটা গাছের ওপর রাখল। আর একটা খরগোশ এনে নদীর ধারে একটা গর্তের মধ্যে জাল দিয়ে জড়িয়ে রাখল। তারপর সে তার স্ত্রীকে গিয়ে বলল, ‘একটা ভারি আশ্চর্য খবর শুনলাম! গাছের ডালে নাকি মাছ উড়ে বসে আর খরগোশ জলে খেলা করে। আমাদের গণকঠাকুর বলেন, মৎস্য বসে গাছে, জলে খরগোশ নাচে। গুপ্তরত্ন খুঁজলে পাবে ঘুরলে তারি কাছে।’ বুড়ি বলল, ‘তোমার যেমন কথা!’
বুড়ো বলল,‘হ্যাঁ! এ রকম নাকি সত্যি সত্যি দেখা গেছে।’ এই বলে বুড়ো আবার কাজে বেরোল। আধাঘণ্টা যেতে না যেতেই বুড়ো আবার ফিরে এসে ভারি ব্যস্ত হয়ে বুড়িকে টাকা পাওয়ার কথা বলল। তখন বুড়ো-বুড়ি মিলে টাকা আনতে চলল। পথে বুড়ো সেই গাছতলায় এসে বলল, ‘গাছের ওপর নড়ছে জিনিসটা কী?’ এই বলে সে একটা ঢিল ছুড়তেই মাছটা পড়ে গেল। বুড়ি অবাক। তখন বুড়ো বলল, ‘নদীতে জাল ফেলেছিলাম, মাছ-টাছ পড়ল কি না দেখে আসি।’ জাল টানতেই বুড়ো অবাক হওয়ার ভান করে বলল, ‘ওমা, খরগোশ যে!’
তখন বুড়ো বলল, কেমন! গণকঠাকুরের কথা বিশ্বাস হলো? টাকা পেয়েই বুড়ি বলল, ‘ঘর করব, বাড়ি করব।’ বুড়ো বলল, ‘ব্যস্ত হয়ো না। ধীরে ধীরে সব করব।’ বুড়ি টাকা পাওয়ার কথা একে বলে, ওকে বলে। একদিন সবাই এসে বুড়োকে জিজ্ঞেস করল, টাকা পাওয়ার কথা সত্য কি না। বুড়ো বলল, ‘সেকি! বুড়ির মাথা ঠিক নেই, সে কত আবোল-তাবোল বলে।’ বুড়ি বলল, ‘আবোল-তাবোল না। সেদিন যে গাছে মাছ বসেছিল, নদীতে খরগোশ ছিল?’ বুড়ির কথা শুনে সবাই হেসে চলে গেল। তখন বুড়ি আর কোনো কথা বলত না।
(হাজং লোককাহিনী)
— সংগ্রহেঃ প্রিজম হাজং, নেত্রকোনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply