একবার একটা গৃহপালিত ছাগল হাঁটতে হাঁটতে ঘাস খেতে খেতে বনের দিকে যাচ্ছিল। বাড়ির উত্তর পাশে ছিল বন। ছাগলটার আর খেয়াল ছিল না যে সে বনের দিকে যাচ্ছে। একসময় সে বনের মধ্যে হারিয়ে গেল। বাড়ি ফেরার পথ সে আর খুঁজে পাচ্ছিল না। এদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে। ছাগলটি তাই বাড়ি ফেরার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলল। সে একটা আশ্রয় খুঁজতে লাগল। বনে বাঘের ভয় আছে। তাই সে সতর্কতার সঙ্গে চারদিক দেখতে দেখতে একটা গুহার কাছে গেল। গুহার কাছে গিয়ে বুঝল যে এটা বাঘের গুহা। ভয়ে ভয়ে গুহার মধ্যে সে দেখল যে কেউ নেই। এমন সময় গুহার মালিকবাঘটি গুহার বাইরে এসে দাঁড়াল। গন্ধ শুঁকে বুঝল যে তার গুহায় কে যেন আছে। তখন সে হুঙ্কার ছাড়ল, ‘হালুম, হালুম! ভেতরে কে রে? শিগগির বাইর হ, নইলে···’ ছাগলটি তখন বুদ্ধি করে বলল, ‘আমার নাম হ্যারহেরি ভ্যারভেরি, ঘোন ঘোন মুখ লাড়ি, যদি এই গুহায় বাঘরে পাই!!’
বাঘ ভাবল কী জাতের কী এক ভয়ংকর জন্তু এসেছে তার গুহায়। না জানি কত বড় সেই জন্তু! এই ভেবে বাঘ ঝেড়ে দৌড় মারল।
এমন সময় বাঘকে দৌড়াতে দেখে গাছ থেকে এক বানর তাকে ডাক দিল, ‘ও বাঘমামা! মামা! যাও কই?’ বাঘ উত্তর দিল, ‘আর কইয়ো না ভাগিনা, আমার গুহায় খুবই ভয়ংকর একটা প্রাণী আইছে। বাপ রে, কী তার নাম, হ্যারহেরি ভ্যারভেরি। নাম শুনলেই তো সাত সমুদ্র তেরো নদী শুকাইয়া যায়।’ বানরের মনে খটকা লাগল। বলল, ‘আরে কিসের ভয়! আমার মতো ভাইগ্না থাকতে কিসের ভয়!’ বাঘ বলল, ‘আমার লগে লও। তয় ডরাইয়া পালাইতে পারবা না কিন্তু।’ বানর বলল, ‘তাইলে আমার ল্যাজের লগে তোমার ল্যাজ গিঁট দিয়া লও।’ বাঘ তার ও বানরের লেজ গিঁট দিয়ে নিল। এরপর বানরকে নিয়ে বাঘ সেই গুহার কাছে আবার গেল। বানর বলল, ‘ওই!! ভেতরে কেডা?!’ ছাগল বলল, ‘আমি হ্যারহেরি ভ্যারভেরি, ঘোন ঘোন···!’ কথা শেষ হতে না হতেই বাঘ ভয়ে দৌড়। বাঘ ভাবল, ‘আর গিয়ে কাজ নেই। সাহস দেখাতে গিয়ে জানটাই না চলে যায়!’ বানর তখন তার লেজের সঙ্গে বাঁধা, বানরটা মাটির সঙ্গে, গাছের সঙ্গে, কাঁটাঝোপের গুঁতা খাচ্ছে। বাঘটি দৌড়ে জমির আইলের ওপর দিয়ে যেতে লাগল, এমন সময় বানর জমির আইলে ব্যথা পেতে লাগল। বানর বাঘকে বলতে লাগল, ‘মামা, আইলে, আইলে!!’ অর্থাৎ সে জমির আইলে ব্যথা পাচ্ছে। ওদিকে বাঘ ভাবল, সেই জন্তুটা তাদের দিকে আসছে। সে আরও জোরে দৌড়াতে লাগল। বাঘ তখন গ্রাম ছেড়ে দূরে পালিয়ে গেল। পথে বানরটি মারা গেল।
এদিকে সকাল হলে ছাগলটি নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে এল।
— সংগ্রহেঃ নাফিসা আবেদীন ও জাহিন আবেদীন, কলেজ এভিনিউ, বরিশাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply