-আমার কী হবে গো মাসি!
-কেন, কী হয়েছে তোমার?
-মনটা য্যান ক্যামন ক্যামন কচ্ছে!
-আহা! খুলে বল দিকি। বয়স হলো তবু ঢঙ গেল না!
-না গো মাসি, ও তুমি বুঝবে না···
-তা বুঝিয়ে দেখো না, না বললে কিরূপে বুঝি?
-এর তো কোনো রূপ নেই লো! রূপে বুঝবে কীভাবে?
-উফ্···শর্টকাটে বলো না।
-আমি পত্তে পাচ্ছিনে!
-কেন রে? চোখ জ্বালা করে বুঝি? দেখি তো, কাছে আয়, চোখ ম্যাল···
-না না, তা নয়!
-বেশি বকিস। বই নিয়ে বস, পড়া শুরু কর, দেখবি গড়গড় করে সব পড়া শেষ হয়ে যাবে।
-হয় না লো হয় না! পড়া মনে থাকে না-
-তা বাপু মানসিক ডাক্তারের কাছে যাও না, আমার সঙ্গে প্যাচাল কেন?
-আহা খেপো কেন! তুমি আপনার লোক বলেই কইছি। তা শুনতে না চাইলে যাই, ও বাড়ির পূজা পিসির কাছে গিয়ে বিলাপ করিগে···
-আরে না না, বল না। তা অত প্যাঁচ করিস কী জন্যি, খুলেই বল না।
-খুলে বলব? আচ্ছা···
-আরে যন্ত্রণা, শার্ট খুলছিস কেন? আমি কি তাই বলেছি নাকি? কথা অত উল্টো বুঝিস কেন রে বাঁদর?
-দ্যাখ! আমার দেহপশ্চাতে কিন্তু দণ্ডবৎ মাংসল বান্দর্যবর্ধক কোনো কিছুর উপস্থিতি নাই। আমি যে বাঁদর নই, তা এখন অসংখ্য যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত···
-না রে বাপু, এবার ক্ষমা দে, কানে ধল্লুম! কী বলছিলি বল!
-হ্যাঁ, যা বলছিলাম। আমার মন যে হারিয়ে গেছে লো মাসি!
-হাড়পাজি হয়েছিস তো! মন আবার হারায় কেমনে?
-হারায় গো হারায়···
-আচ্ছা বল, কোথায় হারাল?
-হ্যাঁ গো, তা খুঁজতে খুঁজতে পেলুম তোমার বাড়ির ছাদে।
-ছাদে! ছাদে কোথায় রে?
-বুঝতে চেষ্টা করো না···
-আমি কী করে বুঝব? কী বকছিস আবোলতাবোল, পরিষ্কার করে বল।
-আহা, অত ভেঙে বলতে হয়? মন আটকা পড়ে গ্যাছে লো মন আটকা পড়ে গ্যাছে!
-কী? তুই তো ভারি সেয়ানা হয়েছিস! কোন মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিস বল, বল কে সে?
-আর কেউ না লো মাসি। ও তোমার···
-আমার!···
-তোমার জলপাই আচারের বয়ামে মনটাকে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। ক্ষমা দেবে মাসি?
-ক্ষমা ক্যান রে?
-মনটাকে দেহের ভেতরে ঢোকানোর জন্য মাত্র একটা বয়াম সাবাড় করেছি···
-তবে রে হতচ্ছাড়া!
— ছন্দানন্দ দাশ
সুপ্ত ছড়াকার ও ছোট গল্পকার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply