একটি বাসা ভাড়া নিয়ে একা একাই থাকেন সিরাজুল। মাসিক টাকার বিনিময়ে একজন বাবুর্চি রেখেছেন রান্নাবান্না, ঘরদুয়ার দেখে রাখার জন্য। কোনো খাওয়াদাওয়ার কথা নেই। প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার, মাছ, মাংস ইত্যাদি সাহেব নিজেই আনেন এবং মাছ-মাংস সংখ্যা গুনে বাবুর্চির লিখিত স্বাক্ষর রেখে বুঝিয়ে দিয়ে যান। দুপুরে এসে রান্না মাংসগুলো সংখ্যায় ঠিক আছে কি না মিলিয়ে নিয়ে খেতে বসেন। একদিন একটি মুরগি রান্না করে, সব কাজ শেষ করে সাহেবের অপেক্ষায় বসে আছে বাবুর্চি। কিন্তু বাবুর্চির মুরগির মাংসের ওপর প্রচণ্ড লোভ হয়। সে মুরগির একটি রান নিয়ে খেতে বসে। তখনই তার সাহেবের গণনার কথা মনে হয়ে যায়। তাই শুধু মাংসে লেগে থাকা ঝোলটুকু চেটে খেয়ে পুনরায় তা পাতিলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। কিন্তু ক্রমশ তার খাওয়ার লোভ বেড়ে যায়, তাই হঠাৎ একটি রান খেয়ে ফেলে। জানালার পাশে বসে ভীষণ চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে। সাহেব এসে গুনে রান তো পাবেন না। তখন কী হবে-ভাবতে ভাবতে সে দেখে, জানালার বাইরে গাছের নিচে একটি মোরগ এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাহেবের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে উঠল সে। সাহেব এসে খেতে বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মুরগির রান একটি কম কেন? নিশ্চয় তুই খেয়ে ফেলেছিস।’ ‘না স্যার, আমি খাইনি। এই মুরগির এক পা ছিল।’ ‘তুই কি আমাকে মফিজ পেয়েছিস?’ ‘বিশ্বাস না করেন, যখন আপনি গ্রামে যাবেন, খেয়াল করলে একপায়া মুরগি দেখতে পাবেন।’ সাহেব একদিন গ্রামে বেড়াতে গিয়ে একটি গাছের নিচে সত্যি একটি একপায়া মোরগ দেখতে পেয়ে বাবুর্চির কথা মনে পড়ে। আর একটু কাছে গিয়ে দুই হাত তুলে হুস করার সঙ্গে সঙ্গে মোরগটি লুকানো পা বের করে দুই পায়ে দৌড়ে চলে যায়। এরপর বাসায় এসে বাবুর্চিকে ডেকে বলেন, ‘গ্রামে একপায়া মুরগি দেখে এসেছি।’ বাবুর্চি বলে, ‘স্যার, সেদিন আমাকে অবিশ্বাস করেছিলেন।’ ‘থাম, মন দিয়ে আমার কথা শোন, আমি কাছে গিয়ে দুই হাত তুলে হুস করার সঙ্গে সঙ্গে মোরগটি লুকানো পা বের করে দৌড়ে দুই পায়ে পালিয়ে যায়।’ বাবুর্চি বলল, ‘স্যার, সেদিন আমি মুরগি জবাই ও রান্না করার সময় হুস করিনি-এখন থেকে মুরগি জবাই ও রান্না করার সময় হুস করব, অবশ্যই লুকানো পা বের হয়ে যাবে!’
— সংগ্রহেঃ হাসমত আলী
পাবনা চকছাতিয়ানী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply