‘আরে ও হাবলুর মা, কই গেলি, মরলি নাকি? সরিষার তেল নে, তাড়াতাড়ি মালিশ কর, পিঠের ছাল তুইল্ল্যা নিল দেখ, কাইন্দা কইলাম কুল পাবি না।’ মাঝরাতে চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে, গৃহস্থের হাতে মার খেয়ে এসব বলছিল কুদ্দুস চোরা। ১০ বছরের ছেলে হাবলুটাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল চুরিবিদ্যা শেখাতে। হাবলুটার কারণেই কুদ্দুস চোরাকে আজ রামধোলাই খেতে হলো। পাশের বাঁশঝাড়ে ছেলেকে রেখে বাপ গেল চুরি করতে। যাওয়ার আগে বলল, ‘খবরদার হাবলু, এক্কেরে শব্দ করবি না, তাইলে কইলাম ধরা খামু।’ হাবলু ভাবল, ‘ধরা’ এটা নিশ্চয় কোনো খাবারের নাম। না হলে খাওয়ার কথা বলল কেন? তখন হাবলু বলে, ‘বাপজান, ধরা তুমি একলা খাইবা না কইলাম, আমার লাইগাও একটু আনবা।’ তখন কুদ্দুস চোরা বলে, ‘চুপ কর হাবলুর বাচ্চা, বইসা থাক, আল্লায় জানে, কেন যে তোরে আনছিলাম।’
ঘরের ভেতর ঢুকে যেই না কুদ্দুস চোরা আলমারি খুলল, অমনি হাবলু হারামজাদাটা চিৎকার জুড়ে দিল-‘বাপজান, আঁরে ও বাপজান, কই গেলা? মশা তো আমারে খাইয়া ফালাইল, অ্যাঁ, অ্যাঁ, অ্যাঁ, এতক্ষণ কী চুরি করো, তাড়াতাড়ি আইস, ভয় লাগতাছে।’ ওই দিকে ছেলের কাণ্ড দেখে কুদ্দুস চোরা অন্ধকারে খেই হারিয়ে ফেলে। ঘরের লোকজন জেগে ওঠে। হাবলুটা আবার শুরু করে, ‘ও বাপজান, মনে হইতাছে এই আন্ধারে আমারে ভূতে ধরতাছে। আমি তো বেহুঁশ হইয়া যাইতাছি। চক্ষে আন্ধার দেহি, অ্যাঁ, অ্যাঁ, অ্যাঁ-আমার লাইগা ধরা না আনলে কইলাম আম্মারে কমু, তুমি একলাই ধরা খাইছ।’ ছেলের এহেন চেঁচামেচিতে ঘরের লোকজন সব জেগে উঠল, আর কুদ্দুস চোরাকে ধরে যার যেমন ইচ্ছা পেঁদানি দিতে লাগল। অবশেষে নাকে খত দিয়ে তারপর ছাড়ল। এরপর কুদ্দুস চোরা খুব কষ্টে গোঙাতে গোঙাতে হাবলুর কাছে এল। তাকে দেখে হাবলু বলতে লাগল, ‘বাপজান ধরা আনছ?’ কুদ্দুস বলল, ‘হজম করবার পারবি?’ ‘দিয়াই দেখো না।’ হাবলু বলল। তখনই কুদ্দুস চোরা বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি ভেঙে হাবলুটাকে পেদানি দিতে লাগল। আর অমনি হাবলুটা চিৎকার জুড়ে দেয়, ‘খামু না, খা-মু-না।’
— সংগ্রহেঃ সিমলা চক্রবর্তী
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply