এক গ্রামে এক কৃষক ছিল। তার ছয় পুত্র ও এক কন্যা। সবাই বোকা। কৃষকের অনেক জমিজমা ছিল। তা সত্ত্বেও বোকা হওয়ার কারণে কেউ কন্যাটিকে বিয়ে করতে চাচ্ছিল না। তাই কৃষক গ্রামের এক রাখাল ট্যাপার সঙ্গে তার মেয়ে টেপির বিয়ে দেয়। ট্যাপা ছিল খুব বুদ্ধিমান।
বিয়ের কিছুদিন পর কৃষক মারা যায়। এদিকে ট্যাপা কৃষকের সব সম্পত্তি একা ভোগ করার জন্য নানা রকম বুদ্ধি আঁটতে থাকে। ট্যাপা তার গরু মাঠে লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধত। আর গরুগুলো কৃষকের জমির ফসল নষ্ট করত। ছয় ভাই এসে তাকে বারণ করলেও সে আবার তা-ই করে। এর ফলে ছয় ভাই একদিন তার গরু জবাই করে তার বাড়ি পাঠায়। ট্যাপা এই দেখে পাল্টা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তখন সে টেপিরে কয়, ‘এই টেপি, কাল সকাল সকাল ভাত রানবি, আমি এই মরা গরুর হাড় নিয়ে হাড়মুড়মুড়ির হাটে যাব।’ পরদিন সে হাড় নিয়ে রওনা হয়। রাস্তায় হঠাৎ এক ব্যক্তি তাকে বলে, ‘ভাই, আমার এই টাকার বস্তা ধরেন, আমি একটু ইয়ে করে আসি।’ লোকটি ট্যাপারে টাকার বস্তা দিয়ে ইয়ে করতে গেলে ট্যাপা তা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। তখন সে টেপিরে কয়, ‘এই দেখ তোর ভাইরা তো আমার একটা গরু মারল, তার হাড়ের দাম এত, আর তোর ভাইগো মতো যদি বড় বড় গরু থাকত, তবে দেখতিস কত টাকা যে আনতাম!’ পরদিন সকালে টেপি গিয়ে তার ভাইদের এসব কথা বলে। সব শুনে তারা ট্যাপার ধারে সব শুনতে আসে। ট্যাপা কয়, ‘হ্যাঁ ভাইজান, হাড়মুড়মুড়ি হাটে হাড়ের জম্মের দাম। আর বেলা যত বেশি হবে, দাম তত বাড়বে।’ সব শুনে বলদ ছয় ভাই তো পরদিন সকালে নিজেদের গরু মেরে সেই মরা গরুর হাড় নিয়ে হাটে যায়। আস্তে আস্তে বেলা হতে থাকে, আর দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। সবাই তাদের বারণ করলেও তারা শোনে না। তারপর হাটের লোকজন বিরক্ত হয়ে তাদের ধরে মার দেয়। তারা বাড়ি এসে ট্যাপার ওপর রাগ করে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার ঘর পুড়িয়ে দেয়। ট্যাপা তখন টেপিরে কয় ছাই বস্তার মধ্যে ভরতে এবং সে ছাই মুড়মুড়ির হাটে যাবে। পরদিন সে হাটে রওনা দেয় এবং একজন লোক তার কাছে টাকার বস্তা রেখে ইয়ে করতে যায় এবং ট্যাপা তা নিয়ে বাড়ি চলে আসে। টেপি তার ভাই বাড়িতে গিয়ে বলে, ‘তোমরা তো আমার একটা ঘর পুড়াই দিছ, তাই তোমাগো জামাই কত টাকা নিয়ে আইছে। আর তোমাগে মতো যদি এত ঘর থাকত, তবে দেখতে কত টাকা আনত।’ সব শুনে ছয় ভাই ট্যাপার ধারে আসে এবং ট্যাপা বলে, ‘তোমরা হাটের দক্ষিণ দিকে বসবা এবং বাতাস আসলি ছাই উড়িয়ে দিবা। লোকজন যত বারণ করবে, তত বেশি উড়াবা।’ ছয় ভাই তো তার কথামতো হাটে গিয়ে কাজ করে। লোকজন ছাই ওড়াতে বারণ করলেও শোনে না। ফলে তারা ছয় ভাইকে ধরে মার দেয়। এদিকে তাদের আসতে দেখে ট্যাপা বাড়ি গিয়ে তাদের বউদের বলে যায় যে, ‘তোমাগে বাড়ি কয়ডা ভূত আসতিছে। তোমরা ইটপাটকেল গুছাই রাখো তারে মারার জন্যি।’ ছয় ভাই বাড়ি আসলিই তাদের বউরা তাদের মারতে থাকে। তারপর অনেক বলার পর তারা বুঝতে পারে যে তারা তাদের স্বামী। তারা সবকিছু শুনে বুঝতে পারে, এই সবকিছু ট্যাপা করাইছে। তাই এইবার তারা পরিকল্পনা করল, ট্যাপাকে বস্তায় করে নদীতে ফেলে দেবে। এই জন্য ছয় ভাই মিলে ট্যাপাকে ধরে বস্তায় ভরল। তখন ট্যাপা বলল, ‘ভাইজান, আমারে তো মারবেন, তা আমারে একখান ছুরি দিয়ে দেন। কারণ মরার পর নদীর তলে যাইয়ে গরুর ঘাস কাটব।’ যেই তাকে নদীতে ফেলল, সেই ট্যাপা ছুরি দিয়ে বস্তা কেটে ফেলল এবং নদীর ওপার থেকে কিছু গরু নিয়ে বাড়ি ফিরল। সে ভাইজানদের বলল, ‘নদীর তলে যে কত গরু আর আমারে যদি একটা লাঠি দিতেন, দেখতেন কত গরু আনতাম।’ সব শুনে বোকা ছয় ভাই গরু আনার জন্য ট্যাপাকে বলল তাদের বস্তায় বেঁধে ভেতরে লাঠি দিয়ে নদীতে ফেলায় দিতে। ট্যাপাও তাদের নদীতে ফেলে দিল এবং তারপর তাদের বউদের তাড়িয়ে শ্বশুরের সব জমির মালিক হলো।
— সংগ্রহেঃ বাপন কুমার হালদার, রূপসা, খুলনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply