এক গ্রামে এক বিধবা তার একমাত্র ছেলে গেদুকে নিয়ে থাকত। বয়স হলেও গেদুর মাথায় কোনো বুদ্ধি ছিল না। বিধবা অনেক কষ্টে ধারদেনা করে সংসার চালাত। কিন্তু এভাবে আর কত দিন। তাই সে ঠিক করল, গেদুকে ঢাকায় তার চাচার বাসায় পাঠাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। পরদিন সকালে গেদু রওনা হলো ঢাকার উদ্দেশে। অনেক কষ্টে সে তার চাচার বাসায় পৌঁছাল। তখন প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। চাচা গেদুকে বলল, ‘যা গোসল করে আয়। অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছিস।’ ‘পুকুর কোথায়?’ গেদুর প্রশ্ন। চাচা হাসতে হাসতে তাকে বাথরুম দেখিয়ে বলল, ‘এটাই পুকুর।’ ভেতরে ঢুকে তো গেদু অবাক! এখানে তো কোনো পানি নেই। কী করবে সে? বাথরুমের যন্ত্রপাতি এটা-ওটা নাড়াচাড়া করতে লাগল। গেদু হঠাৎ দেখে ওপর থেকে ঝমাঝম পানি পড়ছে। থামছেই না। গেদু তার চাচা-চাচিকে ডেকে বলল, ‘সর্বনাশ! ওপর থেকে পানি পড়ছে। আমাদের গ্রামে তো মাটির নিচ থেকে পানি ওঠে।’ গেদুর কথা শুনে সবাই তো হেসে খুন। শহরে গেদুর ভালো না লাগায় সে কিছুদিন পর আবার গ্রামে ফিরে গেল। তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। সে শহরে সব জায়গায় টিউবলাইট দেখেছে। তাই সে মনে মনে ভাবল, ‘টিউবলাইট দিয়ে আলো জ্বালানো তো খুব সহজ, অথচ আমরা তা জানতাম না।’ তাই সে রাতের বেলা গ্রামের প্রায় সব কলাগাছ কেটে ভেতর থেকে বগলি (কলাগাছের ভেতরে অবস্থিত লম্বা, সাদা প্রায় টিউবলাইটের মতো অংশ) নিয়ে আশপাশে সব জায়গায় লাগাল। কিন্তু আলো জ্বলে না কেন? সকালে ঘুম থেকে উঠে গেদু দেখে গ্রামের সবাই তার মায়ের কাছে বিচার দিতে এসেছে। তাদের কলাগাছ যে আর একটাও রাখেনি গেদু। গেদুর মন খারাপ। এত কষ্টের পরও যে আলো জ্বালানো গেল না।
— সংগ্রহেঃ সুলতানা জাহান
পূর্ব মাদারবাড়ী, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ২০, ২০০৯
Leave a Reply