মার্কিন এক ভদ্রলোক গেছেন ক্রিকেট খেলা দেখতে। এর আগ পর্যন্ত ‘ক্রিকেট’ শব্দটির একটাই অর্থ জানতেন তিনি-ঝিঁঝিঁ পোকা! ব্রিটিশ বন্ধুর পীড়াপীড়িতে খেলা দেখতে গিয়ে বুঝলেন ব্যাপারটা মন্দ নয়; একজন বল ছুড়ছেন, আরেকজন সেটা পেটানোর চেষ্টা করছেন (কখনো কখনো সফলও হচ্ছেন) আবার জনা দশেক লোক মাঠের মধ্যে বিনা কাজে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন।
দেখতে দেখতে এক ওভারের খেলা শেষ হয়ে গেল। আম্পায়ার বোলারের হাতে সোয়েটার, চশমা ফেরত দিয়ে বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা করলেন-ওভার। বেচারা আমেরিকান উঠে দাঁড়িয়ে বন্ধুটিকে বললেন, ‘খেলাটা খারাপ না। কিন্তু বড় কম সময়ে শেষ (ওভার) হয়ে গেল।’
ভুল বুঝেছিলেন ভদ্রলোক। আম্পায়ার ‘ওভার’ বলতে ‘সমাপ্ত’ বোঝাননি।
সে যাই হোক, ক্রিকেটে কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিটা বেশ হয়। তা না হলে দুই ব্যাটসম্যান রান নিতে গিয়ে এক প্রান্তে পৌঁছে যান কী করে?
সেই ১৯৫০-৫১ মৌসুমে এমন একটা মহা ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করছিলেন তখন অস্ট্রেলিয়ার শেষ জুটি-জনস্টন ও ইভারসন। অ্যালেক বেডসারের একটা বল বাউন্ডারির দিকে পাঠিয়ে দিয়ে রাজসিক ভঙ্গিতে রানের জন্য হাঁটা শুরু করলেন জনস্টন-রান তো হয়েই যাচ্ছে। উইকেটের মাঝামাঝি এসে বোলারের সঙ্গে গল্প শুরু করলেন তিনি। ওদিকে চোখ-কান বুজে রানের জন্য দৌড় শুরু করেছেন ইভারসন (চোখ বুজে না থাকলে সঙ্গীকে দেখতে পাবেন না?)। এক রান, দুই রান, তৃতীয় রানের জন্য দৌড় শুরু করলেন ইভারসন! তখন জনস্টনের খেয়াল হলো, বল বাউন্ডারির আগে থামিয়ে ফেলেছেন এক ফিল্ডার।
এবার জনস্টন পড়িমরি করে নিজের উইকেটের দিকে দৌড় শুরু করলেন এবং খেয়াল করলেন সঙ্গী ইভারসন আক্ষরিক অর্থেই তাঁর ‘সঙ্গী’! অর্থাৎ দুজনই একই দিকে দৌড়াচ্ছেন। এবার বোধহয় চোখ খুলল ইভারসনের। তিনি আবার উল্টো দৌড় দিলেন। এবং বি্নয়কর সত্যি হলো, বল ফেরার আগে ইভারসন আবার নিজের প্রান্তে পৌঁছে গেলেন। বলুন তো কত রান হলো?
কচু হলো! ইভারসন চারবার উইকেটে দৌড়েছেন (সাড়ে তিন+আধা) আর জনস্টন অর্ধেক রান নিয়েছেন। কিন্তু রান হয়নি একটিও!
ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তবে পরেরটি বড় মর্মান্তিক। এটি অবশ্য ব্যাটসম্যানদের নয়। এক পিতা এবং একজন ক্লাব কর্মকর্তার ভুল বোঝাবুঝি।
সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে এক ভদ্রলোক গেছেন অফিসে (সম্ভবত পত্রিকায় চাকরি করতেন)। বেচারার মন অস্থির। বারবার হাসপাতালে ফোন করছেন। আবার করলেন, কিন্তু রং নাম্বার হয়ে গেল। ফোন চলে গেল এক ক্রিকেট ক্লাবের কর্মকর্তার কাছে।
ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করলেন, ‘ভাই কী অবস্থা?’
‘অবস্থা খুবই ভালো। এই মাত্র আরেকটা বেরিয়ে এল।’
‘আরেকটা মানে কী! কয়টা হয়েছে?’
‘এ পর্যন্ত সাতটা চলে এসেছে। এর মধ্যে তিনটেই আবার হাঁস (ডাক)।’
ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন, ‘বলেন কী ভাই! সব মিলে কতগুলো আসবে বলুন তো?’
‘কেন আপনি জানেন না! ১০টা আসবে।’
বেচারা পিতা! সন্তান ভেবে উইকেটের গল্প শুনছে।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০০৯
Leave a Reply