বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা নেমেছে। সংবাদপত্রের এই শিরোনাম দেখে অর্থনীতির প্রথম বর্ষের ছাত্ররা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ল। তারা পুরো সংবাদটি খুঁটিয়ে পড়ে বুঝতে চাইল ঘটনাটি কী। তবে ঠিকভাবে বুঝতে পারল না। কিন্তু এটা তো আর বাইরে কাউকে বলা যায় না। বিশেষ করে অন্য বিষয়ে অধ্যয়নরত বন্ধুরা যদি মন্দা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে, তখন তো মহা মুশকিল হবে।
বড় ভাইয়েরা লাইব্রেরিতে মোটা মোটা বই নিয়ে বসে ছিল। সামনে তাদের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা। বিরক্ত করা ঠিক হবে না। তবু হাতে-পায়ে ধরে কয়েক মিনিটের জন্য কয়েকজনকে বাইরে নিয়ে আসা হলো। গম্ভীরমুখে বড় ভাইরা খবরটি পড়ল। তারপর একজন বলল, ‘তাতে সমস্যাটা কী? মন্দা তো বিশ্ব অর্থনীতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নয়।’
প্রথম বর্ষের ছেলেরা বলল, তারা মন্দার বিষয়টি বুঝতে চায়।
‘তোমাদের এখনো বোঝার সময় হয়নি,’ আরেকজন বড় ভাই বলল। ‘আগে বেসিক ইকোনমিকস পড়া শেষ করো।’
জুনিয়ররা হতাশ হয়ে চলে গেল। কিন্তু বড় ভাইয়েরা নিজেরা পড়ল চিন্তায়। ‘ওদের তো ভাব দেখিয়ে বিদায় করে দিলাম,’ বলল একজন। ‘অথচ নিজেরাও তো মন্দার বিষয়টা বুঝতে পারছি না।’
শেষে তারা গেল বিভাগীয় অধ্যাপকদের কাছে। সব শুনে তাঁরা তো মহা খাপ্পা। বললেন, ‘কয়েক দিন পরে অর্থনীতিতে মাস্টার্স পাস করবে, অথচ মন্দা বোঝ না। যাও, লাইব্রেরিতে গিয়ে ভালোভাবে পড়ো।’
মাস্টার্সের ছাত্ররা চলে যাওয়ার পর অধ্যাপকেরা নিজেরা একে অপরের দিকে তাকালেন। শেষে একজন বললেন, ‘বিষয়টা নিয়ে একটা সেমিনার করতে হবে।’ অন্যরাও তাতে সমর্থন দিল। পিয়নকে ডাকা হলো সেমিনারের নোটিশ লেখার জন্য কাগজ দিতে। শিরোনাম লেখা হলো, ‘বিশ্বমন্দার কারণঃ পরিপ্রেক্ষিত ও প্রতিক্রিয়া’।
‘এবার যাও, এটা কম্পোজ করিয়ে আনো,’ নির্দেশ দিলেন একজন অধ্যাপক। কাগজটা পড়তে পড়তে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পিয়ন হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। বলল, ‘স্যার, এই একটা ছোট ও সাধারণ বিষয় নিয়ে এত বড় সেমিনার করবেন?’
‘মানে?’
‘স্যার, মন্দা হলো সেই সময়, যখন আমার প্রতিবেশী চাকরি হারায়।’
‘হুম,’ রাগত স্বরে বললেন প্রধান অধ্যাপক, ‘তাহলে মহামন্দা কী?’
‘যখন আমি চাকরি হারাই।’
— আসজাদুল কিবরিয়া, ইন্টারনেট অবলম্বনে
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৬, ২০০৯
Leave a Reply